ভূকা ২৩ : নিশির ডাক

আমাদের গ্রামের বাড়িতে কোন একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে একবার অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছিলো। অনুষ্ঠানটি হয় রাতর বেলা। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে অনেক রাত হয়ে যায়, ফলে যাদের বাড়ি দূরে তারা সবাই ঠিক করে যে আজ এখানেই থাকবে। মামার বাড়িতে মোট ৫ টা ঘর আর একটা বাংলো ঘর। বাংলো ঘরটা তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। বাংলো ঘরের ডান পাশে কিছুটা দূরে গোয়াল ঘর। যেহেতু, অনেকেই রাতে থাকবে, তাই ঘরের অভাব শর্ট পড়ে গেলো। তাই মামামামি সিদ্ধান্ত নিলো তারা তাদের ঘরটা ছেড়ে বাংলো ঘরে চলে যাবে। রাতটা সেখানেই কাটাবে।


তখন রাত প্রায় ২টা। মামার টয়লেট চাপায় তিনি জেগে উঠেন। উনি দরজা খুলে বাইরে উঠোনে একটু দূরেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি একটা শব্দ শুনতে পান। তিনি এদিক ওদিক তাকান। হটাৎ তার দৃষ্টি যায় গোয়াল ঘরের দিকে। তিনি দেখতে পান গোয়াল ঘর থেকে তাদের সাদা রঙের গরুটা কিভাবে যেনও বের হয়ে পড়েছে। মামার তখন মনে পড়ে গোয়াল ঘর সন্ধার পর সবসময় তালা লাগানো থাকে। গরুটা বের হয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করে দেয়। গোয়াল ঘরের ঠিক পিছনেই একটা বড় আকারের ঝোপ। অনেকটা জঙ্গলের মত। মামা গরুটার পিছু নিলেন।


এদিকে মামার দেরি দেখে মামিরও ঘুম ছুটে যায়। তিনি বাইরে এসে দাঁড়ান এবং দেখতে পান মামা হাঁটছেন আর তার সামনে একটা সাদা কিছু। মামি ভয় পেয়ে চিৎকার করে মামাকে ডাক দেন। কিন্তু মামা মামির ডাক শুনতে পেয়েও না থেমে উল্টো হাঁটতে থাকেন। মামি ভয় পেয়ে ছুটে গিয়ে মামাকে থামান। মামা তখন কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন, “আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে। আমাদের গরুটা চলে যাচ্ছে।” কিন্তু মামি বলেন ঐটা আমাদের গরু না, তারপর তাকে জোর করে ঘরে নিয়ে আসেন। সকালে মামামামি ২জনই গোয়াল ঘোরের তালা পরীক্ষা করে দেখেন তালা দেয়াই আছে। আর সবকটা গরুই ঠিকঠাক মতন নিজ নিজ জায়গায় আছে। মামি তখন মামাকে বলেন, গতকাল রাতে তাকে “নিশা” ডাকছিল। মামি যদি তখন না উঠতেন ঘুম থেকে আর মামাকে না থামাতেন, তাহলে গরু রূপি “নিশা” মামাকে বনের ভেতর নিয়ে মেরে মাটিতে গলা অব্দি পুঁতে রাখতো।


ভূকা ২২ : সর্বভুক জিন রাজু

নাম তার জিন রাজু। নামের মধ্যেই যেন চমক। সে কি খায়? তা জানার আগে জানতে হবে সে কি না খায়। জিন রাজু খায় কীটনাশক বাসুডিন, জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, টিকটিকিসহ আরো কতো কি। দু'তিন কেজি ইউরিয়া সারও তার স্বাভাবিক খাবার। কখনো ফাঁসির দড়ি গলায় লাগিয়ে ঝুঁলে পড়ে গাছের ডালে!

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাছপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম সরকারের ছেলে রাজু। ৭ ভাই ২ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। ছোট বেলা থেকে দুর্দান্ত সাহসী ছেলে রাজু। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বতর্মান বয়স ৩৫। প্রথম খায় বিষ: ক্লাস থ্রিতে তখন পড়ে রাজু। বয়স ১০ কি ১১ হবে। নিজেদের ফসলি ক্ষেতে পোকামাকড় দমনের জন্য এক বোতল কীটনাশক আনে বাবা। সেই কীটনাশক বোতল হাতে নিয়ে ভাবনায় মসগুল রাজু। এই বিষ খেয়ে পোকা মাকড় মরে। কিন্তু আমি খেলাম অথচ মরলাম না_এমন যদি কিছু একটা হয়ে যায়। নিশ্চয়ই চারদিক জানাজানি হবে। নাম খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। এমনই এক ভাবনা থেকে তার শুরু। প্রথমে মাথার চুল কীটনাশক বোতলে ডুবিয়ে চুল চুষে চুষে খায়। এতে বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে। ২/১ দিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু। প্রতিদিন একবার। তারপর দুইবার চুষে খায়। ক্রমেই সহ্য এসে যায় তার। এক পর্যায়ে চুল বাদ দিয়ে সুতার আগা কীটনাশকে ভিজিয়ে খেতে শুরু করে। এরপর ড্রপারের সাহায্যে অভ্যস্ত হয়ে যায়। বতর্মানে সে বোতল দিয়েই কীটনাশক খেয়ে রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। খাদ্য তালিকায় আর যা আছে: সাপ, তেলাপোকা, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ, গুঁইসাপ, বিড়াল, কুকুর, শিয়াল সবই তার খাবার। এক কথায় সর্বভুক রাজু। তবে তার শর্ত দুটি। এগুলো জীবিত এবং দেশি হতে হবে।

অনেক জায়গায় উণ্ডুক্ত মঞ্চে বিচিত্র এসব খাবার খেয়ে বিপুলসংখ্যক দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে সে। ফাঁসিতে ঝোলা তার সর্বশেষ চমক: সাধনা তার চলছে। গলায় ফাঁস লাগানো দড়ি গাছে ঝুলিয়ে থাকেও সে কিছুক্ষণ। বিপজ্জনক কর্মে তার সাধনা চলছে দীর্ঘ এক যুগ ধরে। এ বিষয়টি নিয়ে তার উণ্ডুক্ত চ্যালেঞ্জ যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে ভেবে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রহণ করেনি। ফলে সে নিজেকে অপ্রতিদ্বদ্বী মনে করে। কেমন করে জিন রাজু হয়ে ওঠা: অলৌলিক কিছু 'জিন' দ্বারাই সম্ভব বলে নিজ থেকে রাজু নামের সঙ্গে জিন শব্দটি যুক্ত করেছে বলে সে জানায়।

তার কর্মকাণ্ডও জিনের মতো অলৌকিক বলে মানুষও এ নামে ডাকে। এছাড়া, জিন রাজু ডাকটি তার নাকি খুব ভালো লাগে। এলাকায় একটি কথা লোকমুখে আছে, ছোট শিশু বাচ্চারা দুষ্টমি করলে কিংবা না ঘুমাতে চাইলে মায়েরা জিন রাজুর কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যায়। ফ্রি চিকিৎসায় ছুটে চলা: সাপে কাটা কোনো রোগীর খবর পেলেই হলো। এক আজব আকর্ষণে ছুটে যেতে হয় তাকে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় বলে কথা নেই। ফ্রি চিকিৎসা তার গুরুর আদেশ। সামান্য পানিও পান করা যায় না রোগীর বাড়ি। এছাড়া, বাচ্চাদের বাতাস লাগা, রাতে বিছানায় প্রসাব করা, জিনে ধরা ইত্যাদি রোগেও চিকিৎসা করে সে। রাজুর নিজের কথা একদিনে এসব সাধন হয়নি। অনেক ধৈর্য, নীরব সাধনা করতে হয়েছে। ভারতের কামরূপ কামাখ্যায় থাকতে হয়েছে বেশ ক'বছর। ভাত, রুটির বদলে খেতে হয়েছে গাছের পাতা, বাকল। এক উপজাতি গুরুর শিষ্যত্ব পেয়ে ধন্য হয় জীবন।

তার বক্তব্য আমাদের দেশের বড় সমস্যা দারিদ্র্য। আমি এমন কিছু খাবার খেতে চাই যা খেয়ে দীর্ঘদিন না খেয়েও সুস্থ থাকা যায়। অনেক স্বপ্নই পারিবারিক দুরবস্থার জন্য সম্ভব হয় না। চর্চা চালাতেও হোঁচট খেতে হয় অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে। আমি যা খাই, হজম করি তা তিলে তিলে সাধনার ফল। আমার মতো শখ করে কেই যেন সর্বভুক না হয়। তাহলে কিডনি যাবে, পাকস্থলি যাবে, এমনকি যাবে স্বাদের এ জীবনটাই। রাজুর ইচ্ছে: অনেক দিনের সাধনা তার খ্যাতির জন্য। খ্যাতির জন্য মানুষ কি না করে। তার ইচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে তার আজব খাবার-দাবারের দৃশ্য দেশবাসীকে দেখানো। প্রয়োজনে মিনিট দুয়েকের জন্য ফাঁসিতে ঝোলাও।

হানিফ সংকেতের ইত্যাদি তার প্রথম টার্গেট।

ইতমধ্যে স্যাটেলাইট একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রস্তাব পেলেও সে রাজি হয়নি। তার চাই বাংলাদেশ টেলিভিশন_এটি শহর-গ্রাম জনপদের সর্বসাধারণ দেখে। এমন সুযোগ পেলে তার স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে, সার্থক হবে পরিশ্রম।


ভূকা ২১ : ভেন্টিলেটর দিয়ে জিন প্রবেশ করছে

সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের দিগন্ত-২৭ হাজী ভিলার নিচতলা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয় জিকির আসকার। চলে রাতভর। গতকাল ভোর হতেই বাসার ভেতর থেকে ভেসে আসে জিকিরের সঙ্গে শোর-চিৎকার। এগিয়ে যান প্রতিবেশীরা। দরজায় কড়া নাড়েন, তবে খুলে দেয়নি কেউ। বাসার একটি রুমের জানালা দিয়ে পুলিশ ডাকতে বলেন ওই বাসার ভাড়াটে সপু চৌধুরী। সকাল সাড়ে ৭টায় পুলিশ এলে দরজা খোলেন বাসার মহিলারা। বাসার একটি রুম থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় স্কলার্সহোম কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করা মেধাবী ছাত্রী সৈয়দা মারওয়া রিফাতকে। প্রথমে তাকে নগরীর একটি ক্লিনিক ও পরে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রিফাতের ছোট ভাই সৈয়দ মারওয়ান রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার মা অনেক দিন থেকে মানসিক রোগে ভুগছেন। বাসায় জিন-ভূতের আগমন ঘটেছে বলে রাতে তিনি প্রায়ই চিৎকার করতেন। এক সপ্তাহ আগে তার মামা ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী দুবাই থেকে আসেন। দু'দিন পর থেকে মামার মধ্যেও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বাসার কাজের বুয়া রুকিনার পরামর্শে তার মা দারস্থ হন রায়নগর দর্জিবন্দের কথিত পীর মা তফুরা বেগমের। 'পীর মা' সবকিছু শুনে বলেন, তাদের বাসায় জিন-ভূত 'আছর' করেছে। গত বুধবার থেকে তিনি জিন-ভূত তাড়ানোর চিকিৎসা শুরু করেন। চিকিৎসার জন্য একটি গরু ও এক ভরি স্বর্ণ দাবি করেন 'পীর মা'। তার চাহিদা অনুযায়ী গরু ও স্বর্ণের মূল্য বাবদ ৭৭ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয় বুধবার। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় পরিবারের সবাইকে পীর মায়ের কাছে নিয়ে যায় কাজের বুয়া। পীর মা তাদের 'ফুল ভেজা পানি' খেতে দেন। সঙ্গে দিয়ে দেন কয়েকটি তাবিজ এবং আরও কিছু পানি ও তেল পড়া। নির্দেশ দেন রাতভর জিকির আসকার করতে।

মারওয়ান জানায়, রাতের খাবার খেয়ে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। শুধু তার মা বাসার উত্তর পাশের রুমে উচ্চৈঃস্বরে জিকির করতে থাকেন। রাত ২টার দিকে তিনি সবাইকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে বলেন, ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে জিন-ভূত প্রবেশ করছে। তিনি সবাইকে নিয়ে ওই রুমে জড়ো হয়ে জিকির শুরু করেন। কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দেন ঘরের সবক'টি ভেনটিলেটর। মুঠোফোনে পীর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার পরামর্শ নেন। রুমের ভেতর কাগজ ও কাপড় পুড়িয়ে সবাইকে মুখের ভেতর ধোঁয়া নিতে বলেন। পীর মায়ের দেওয়া বিকট গন্ধযুক্ত পানি খেতে দেন সবাইকে। এরপর আবারও পীর মায়ের পরামর্শ নেন মুঠোফোনে। পীর মায়ের নির্দেশ অনুযায়ী বাসার সবাইকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করেন। মেয়ে রিফাত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে রাজি না হওয়ায় 'পীর মায়ের' পরামর্শে-নির্দেশে রিফাতকে বাথরুমে ঢুকিয়ে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে বালতির পানিতে মাথা চুবাতে থাকেন মা সিদ্দিকা চৌধুরী ও মামা ইশতিয়াক চৌধুরী। এক সময় রিফাত অচেতন হয়ে পড়ে। থানা হাজতে আটক কাজের বুয়া রুকিনা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে পীর মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী সারা রাত জিকির করা হয়। এ সময় গৃহকর্ত্রী সিদ্দিকা চৌধুরী ও তার ভাই ইশতিয়াক চৌধুরী পরিবারের লোকজনকে মারধর করেন। 'পীর মা' তফুরার ছেলে থানাহাজতে আটক ইসলাম উদ্দিন জানান, সাত বছর বয়স থেকেই তার মা 'পীরাকি' পেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সারারাত তার মা জায়নামাজে বসে রিফাতের পরিবারের জন্য দোয়া করেছেন এবং মুঠোফোনে সিদ্দিকা চৌধুরীকে পরামর্শ দিয়েছেন। সিলেট কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক নারায়ণ দত্ত জানান, কথিত 'পীর মা'কে আটক করতে তার আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কথিত পীরের বোন, ছেলে, ছেলের বৌ ও নিহতের বাসার কাজের মেয়েকে আনা হয়েছে।

ঢাকা, শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১০, বাংলাদেশ প্রতিদিন


ভূকা ২০ : কালীসাধিকার বান

আমার বাবা একজন সরকারী চাকরীজীবি ছিলেন। উনি জীবনে কখনই ভুত প্রেতে বিশ্বাস করতেন না- কিন্তু ভগবানকে খুবই বিশ্বাস করতেন। আমাদের গ্রামে আমার ঠাকুরদাদা ও বাবার বেশ সুনাম ছিলো এবং আছে। কিন্তু আমার বাবার শত্রুও ছিলো। আমার ঘরেরই শত্রু- আমার ছোট ঠাকুরমা। উনি আমার দাদুর ছোট ভাই এর বৌ ছিলেন এবং উনি কারো উন্নতি সহ্য করেন  না। কেউ উন্নতি করতে গেলেই উনি বাঁধা দিতেন-পরোক্ষ ভাবে।

আমার বাবা যখন আমাদের গ্রামেই ২ কাঠা জমি কিনেন বাবাদের চার ভাই মিলে তখন ঐ মহিলা আমার বাবাকে বাঁধা দেন মৌখিক ভাবে; বলেন উনার স্বামী-আমার ছোট দাদু মারা গেছেন নতুন জমি কিনে ওখানে পুকুর খুরতে গিয়ে। আমার বাবাও ঐ নতুন জমিতে পুকুর খোড়ার পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা জানতেন ঐ মহিলার কান্ড কারখানা, তাই কিছু না বলে পুকুর খোঁড়ান, তারপর পুকুরপাড়ে গাছ লাগান অনেক।

এর ১ বছর পর বাবার হার্ট এর প্রবলেম শুরু হয়। বাবা কাউকে বলতেন না উনার অসুখের কথা-শুধু মা জানত। মা ডাক্তার দেখান বাবাকে। আমি তখন ঢাকায়। বাবাকে ডাক্তার অনেক চেকআপ করান - অসুখ শুধু পেলেন হার্ট এর একটা ভেইন পুরু হয়ে গেছে চর্বি জমে। এটা খুব সাধারণ অসুখ তাই ডাক্তার নরমাল হার্ট এর ঔষধ দিলেন।

এভাবে কিছু দিন চলল। আমি তখন ঢাকা-বাবার অসুখ বেড়ে গেল। ডাক্তাররা কোন রোগ ধরতে পারছিলেন না। এমন সময় মার মনে সন্দেহ হয়-উনি এক কালীসাধিকার কাছে যান। কালীসাধিকা বলেন বাবাকে বান মারা হয়েছে; মরণ বান। বাবার হাতে ১০ দিন বাকি আছে -১০দিনের মাঝে বান কাটা না হলে বাবা মারা যাবেন। কে মেরেছে জিজ্বাসা করতেই ঐ মহিলার নাম বলেন কালীসাধিকা - যদিও কোন দিনই উনারা পরিচিত ছিলেন না।

মা বান কাটান ১০০০ টাকা খরচ করিয়ে। বান কাটানোর পরে বাবা সুস্থ হয়ে ওঠেন অনেকটা। দিন তিনেক না যেতেই বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা আবার যান ঐ কালীসাধিকার কাছে-কালীসাধিকা আবার বান কাটেন-এবার নাকি ৭ দিনের মাঝে মারা যাওয়ার জন্য বান মেরেছিলেন।


এরপর বাবা আবার সুস্থ হলেন। এর মাঝে ঐ মহিলা বাবাকে দেখতে আসেন। বাবাকে দেখতে আসার ছলে বাবাকে আবার বান মারেন উনি। বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবার খুবই খারাপ অবস্থা হল বাবার। হাসপাতালে ভর্তি করা হল বাবাকে। আমার কাকারা মার একটা কথাও বিশ্বাস করতেন না। তাই উনারা ডাক্তার এর কথার উপর ভরসা করেন।ডাক্তাররা বাবার হার্ট ব্লক ছাড়া কোন রোগই ধরতে পারছিলেন না।

এমন সময় মা আবার ঐ কালীসাধিকার কাছে লোক পাঠালেন -আর নিজে বসে থাকলেন বাবার পাশে - কালীসাধিকা আবার বান কাটলেন-এবার একটা আস্ত ডাবের ভেতর থেকে গল গল করে রক্ত বের হয় - এ সময় আমার বাবার মুখ দিয়েও বেশ রক্ত ঝড়ে। এর আগে বাবা বিছানায় বেশ ছটফট করছিলেন - বান কাটার পর তিনি বেশ সুস্থ হন। ডাক্তার বিকেল বেলা ছেড়ে দেবেন জানান। আমি ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম-ডাক্তারের কথা শুনে আমিও বাসায় চলে আসি। বাবার পাশে শুধুই মা ছিলেন।
 এর এক ঘন্টা পরেই বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে ঐ মহিলা এক ঘন্টার বান মেরে বাবাকে মেরে ফেলতে পারেন।

বাবা এক সময় মারা যান। আমি শুনে স্থম্ভিত হয়ে পড়ি।

এরপর বাবাকে অনেকেই দেখেছে আমাদের গ্রামে যাওয়ার রাস্তায়। কেউ কেউ বাবার কান্না ও শুনেছে-কিন্তু যে আমি চাই বাবাকে খুব কাছে পেতে সেই আমার কাছে বাবা কখনোই দেখা দেননি। হয়তো আমি ভয় পাবো বলে। তবে এখনও কোন বিপদ হলেই তার আগে বাবাকে স্বপ্নে দেখি। দেখি বাবা হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আমার মাথায় - ঠিক যেমনটা আমাকে দিতেন ৫ বছর আগে।


পাঠিয়েছেন:
nosto kobi


ভূকা ১৯ : চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ‘বান নিক্ষেপ’

ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ কওছর আহমদ হঠাৎ করে রহস্যজনক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে, প্রতিহিংসা বশতঃ তাকে ‘বান নিক্ষেপ’ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চেয়ারম্যানের বাড়ীতে গিয়ে উঠান জুড়ে প্রায় শখানেক মাওলানাকে খতম পড়তে দেখা যায়।

জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে সৈয়দ কওছর আহমদকে মোবাইলে জানানো হয় তাকে প্রাণে মারার জন্য সুনামগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জের দুজন কবিরাজ দিয়ে তাবিজ কবজ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কওছর আহমদ মোবাইলের বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যান। বিকাল ৫টার দিকে দক্ষিণ গোয়ালাবাজারে তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাকে স্থানীয় ডাক্তারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার তার রোগ ধরতে না পেরে তাকে বিশ্রামের নির্দেশ দেন।

রাত ১১টার দিকে সৈয়দ কওছর আহমদ তার বাড়ীতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙ্গলে তিনি তার সারা শরীরে অবচেতন বোধ করেন। তার মুখ ও জিহ্বা বাঁকা হয়ে যায়। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। সাথে সাথে ডাক্তার নিয়ে যাওয়া হলেও ডাক্তাররা এ রোগ তাদের দিয়ে সারানো সম্ভব নয় বলে জানান। পরবর্তীতে তাকে সিলেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হলে এ সময় চেয়ারম্যানের অসুস্থ্যতার খবরে তাকে দেখতে আসেন পারিবারিক আত্মিয় পইলভাগের মাওলানা মনোয়ার আহমদ।


তিনি কপালে হাত দিয়ে সৈয়দ কওছর আহমদকে পর পর ৩টি বান (!) মারা হয়েছে বলে জানান। মাওলানা মনোয়ার আহমদ কিছুক্ষণ ঝাড়-ফু দিলে সৈয়দ কওছর আহমদের শরীরে চেতন ফিরে আসে এবং তিনি কথা বলতে শুরু করেন। কওছর আহমদকে বান মারা হয়েছে এমন খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায়।

অসুস্থ সৈয়দ কওছর আহমদ বলেন, আমি জানি না সত্যি সত্যি আমাকে বান মারা হয়েছে কি না। তবে যদি কেউ এ কাজ করে থাকেন তবে তা মানবতা বিরোধী বলেই ধরে নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা থাকবে। বিরোধীতার খাতিরেই বিরোধীতা করতে হয়। কিন্তু কেউ কারো প্রাণ সংহার করবে-এমনটা কখনোই কাম্য নয়। আমি এ বিচারের ভার মহান আল্লাহ এবং এলাকার জনগণের উপর ছেড়ে দিলাম।

দৈনিক উত্তর-পূর্ব
২২ জুন ২০১১


ভূকা ১৮ : সময় তখন রাত ২.৫৯

আতিক, মোতাহের, সাবু, আর মাহবুব। চার বন্ধু । প্রানের বন্ধু বলতে যাকে বোঝায়। স্কুল লাইফ থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি অবধি সবাই একসাথে। একজন আরেকজনের জীবনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, পাওয়া–না পাওয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যখন তারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, তখন কত মজা করেই না দিনরাত এক করে আড্ডা দিতো। টি, এস, সি, রমনা পার্ক, কার্জন হল ধাপিয়ে বেড়াতো চারবন্ধু মিলে। কিন্তু সুখপাখি কখনো চিরদিনের জন্য খাঁচায় বন্দি থাকতে চায় না। ছাড়তে তাকে হবেই। ভার্সিটি পাশের পর একেকজন চলে গেলো একেক দিকে। মোতাহেরর চাকরি হল টেলিকম কোম্পানিতে, মাহবুবের হল ব্যাংকে। সাবু চলে গেলো ঢাকা ছেড়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে। এখন তাদের মাঝে আর দেখা সাক্ষাত হয় না তেমন একটা।

এইবার ঈদের ছুটিতে সব বন্ধু একত্র হবার প্ল্যান করলো তারা। পরিকল্পনাকারী মূলত মোতাহের। পাশ করার পর গ্রামীনফোনে চাকরি করছে। খোলামেলা জীবনটা হঠাৎ করে যেনও খুব বেশি যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। যেইসব বন্ধুদের ছাড়া আগে একটি দিন কাটানো মুশকিল হয়ে যেত, আজ তাদের সাথে ফোনে কালেভদ্রে কথা হয়। আর দেখা প্রায় হয় না বললেই চলে। পরিকল্পনার কথা খুলে বলল সবাইকে। ঈদের তৃতীয়দিন টি, এস, সি তে চার বন্ধু দেখা করবে ঠিক হল।

যথাসময়ে জায়গামত পৌঁছে গেলো তিনজন। শুধু আতিকের দেখা নেই। সাবু জানালো, আতিকের সাথে কথা হয়েছে তার। আতিক নাকি অফিসিয়াল কি একটা কাজে ঈদের পরদিনই পঞ্চগড় ফিরে গেছে। আজকে সকালে ঢাকায় এসে তাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা। কিন্তু কথা রাখেনি সে। হয়তো অফিসিয়াল কাজটা বেশি জরুরি ছিল, হয়তো শেষ মুহূর্তে আটকে গেছে। পরস্পরকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তারা। কিন্তু আতিকের একেবারেই যোগাযোগ না করার ব্যাপারটা কেমন কেমন যেনও ঠেকল সবার কাছেই। তবে কি শুধু সময়ের প্রয়োজনেই বন্ধুত্ব?? আজ সবার জীবন আলাদা পথে ধাবমান। কে কার জন্য কোথায় বসে আছে তা দেখার সময় কই??

 ভুলটা ভাঙল পরেরদিনের খবরের কাগজ পড়ে। খবরের কাগজে ছোট করে একটা খবর দেয়াঃ 

বেপরোয়া গাড়ি চালানোঃ

বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পঞ্চগড়ে রুটে ৫জন নিহত।

ব্যাপারটা সর্বপ্রথম লক্ষ্য করে মোতাহের। বাকিদের সাথে সাথে জানায়। হতদন্ত হয়ে ছুটে আতিকের বাসায়। যেখানে ঈদের খুশিকে ছাপিয়ে আকাশে বাতাসে গুঞ্জন তুলে বেড়াচ্ছিল আতিকের আত্মীয় স্বজনের আহাজারি।
যান্ত্রিক জীবনে বেঁচে থাকা এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়ার তাড়নায় আবার নতুন করে জীবন শুরু করে তিনবন্ধু। সেই জীবনে নেই তাদের একজন প্রিয় মানুষ। যার জন্য তারা অপেক্ষা করে ছিল। একবারের জন্যও শেষ দেখাটা হল না।


প্রায় ৪-৫ মাস পরের ঘটনা।
 মাহবুব বিয়ে করেছে ২ বছর হল। ভার্সিটিতে পরিচয়, সেই সূত্রেই বিয়ে। বাবা–মা বিয়ে মেনে নেয়নি দেখে আলাদা বাসা নিয়ে থাকে জামাই বউ।

মঙ্গলবার রাত ১২টার পরের ঘটনা।
 ঘুমাচ্ছিল মাহবুব। পাশেই তার বউ আসমা শোওয়া। হটাত মাহবুব অনুভব করলো তার বিছানার পাশে বসে কে যেনও আলতো করে হাত রাখল তার গায়ে। আসমার হাত মনে করে প্রথমে পাত্তা দিল না সে। কিন্তু পরের কণ্ঠস্বরটা শুনে ঘুম ছুটে গেলো তার। এই কণ্ঠস্বর যে তার চিরচেনা!! এ তো আতিকের কণ্ঠ! আস্তে আস্তে তাকে ডাকছে, “হুউঁ, কিরে গাধা! এখনও আগের মতই আছিস? হুউঁ? ঘুমুলে আর ঘুম ভাঙ্গানো যায় না রে তোর। উঠ একটু। তোর সাথে কথা ছিল। আমি বেশি সময়ের জন্য আসতে পারেনি। এখুনি আবার চলে যেতে হবে।”

ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলো মাহবুব। এইতো, সামনে তো আতিকই বসা!! তার প্রানের বন্ধু, আতিক, ফিরে এসেছে!

- “উঠলি শেষ পর্যন্ত!” হাল্কা করে হেসে বলল আতিক।

মাহবুবের মাথায় এই বুদ্ধিটুকু তখন কাজ করছিলো না যে আতিক জীবিত নয়- মৃত। নিজ হাতে কবর দিয়ে এসেছে সে তাকে।
আতিকের একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “দোস্ত, আছিস কেমন তুই?”

একটু হেসে বলল আতিক, “ভালোই রে!”

- “তারপর কেমন চলছে সব??”
- “ভালোই! শোন, তোর সাথে খুব জরুরি কথা ছিল দোস্ত। আমার হাতে বেশি সময় নেই। আমি যা বলব তা চুপচাপ শুনে যা।”
- “আচ্ছা”  সুবোধ বালকের মতন উত্তর দিল মাহবুব। ঠিক যেনও একটা ছোট বাচ্চা তার অনেকদিনের প্রিয় খেলনাটা ফিরে পেয়েছে।

- “সেদিন আমি তোদের সাথে মিট করার জন্যই রাতের বাসে পঞ্চগড় থেকে রওনা দেই। পথে আমাদের বাসটা এক্সিডেন্ট করে। ঘটনাস্থলেই আমি মারাত্মক ভাবে আহত হই। বারবার তোদের কথা মনে পড়ছিল। মারাত্মক কষ্ট হচ্ছিল রে। মনে হচ্ছিল কেউ যেনও আমার জ্যান্ত দেহটা থেকে চুরি দিয়ে কেটে কেটে হৃৎপিণ্ডটা খুলে নিচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছিলাম না। পৃথিবীটা যেনও লাটিমের মত ঘুরছিল। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হাসপাতালে নেয়া হয় আমাকে। ডাক্তাররা চেষ্টা করার আগেই মারা যাই আমি।”

বিমূঢ়ের মত শুনছিল মাহবুব। প্রশ্ন করলো, “তারপর??”

“দোস্ত, এতো কষ্ট কেন হচ্ছিল জানি না। বার বার চোখে তোরা ভাসছিলি। তোদের কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি দোস্ত। পরে জেনেছি সেদিন আমার জন্য রাত ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলি তোরা। মোতাহেরটা তো আবার একটু পাগল। ও নাকি রেগে ছিল আমার উপর। আড়ালে কেঁদেছে আমার উপর অভিমান করে!! আমাকে মাফ করে দিস তোরা। যাবার বেলায় তোদের বিদায় নিয়ে যেতে পারলাম না। শেষবারের মত দেখতে পারলাম না চামড়ার চোখ দিয়ে। আমি অনেক বেশি সরি রে। মাফ করবি তোদের এই বন্ধুটাকে??”

ঘোরের মধ্যে বলল মাহবুব, “ছিঃ, এইসব কি বলছিস তুই?”

এই পর্যায়ে মাহবুবকে জোরে ধাক্কা দেয় আসমা। “এই, কি ঘুমের মধ্যে বসে বসে বকবক করছ?? শুয়ে পড়ো!”
সাথে সাথে যেনও ঘুম থেকে জেগে উঠে মাহবুব। নিজেকে খাটের উপর বসে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে। সাড়া গা ঘামে ভিজে একাকার। আসনপিঁড়ি করে বসে আছে। ঠিক যেই ভঙ্গিতে বসে কথা বলছিল আতিকের সাথে।
নিজের মোবাইলের ডিসপ্লে দেখে সে। রাত ২.৫৯।

ঘটনার ৩দিন পর।

ঢাকার একটি স্বনামধন্য রেস্তোরায় বসে আছে মোতাহের, সাবু, আর মাহবুব। কারো মুখে কথা নেই। মাহবুবের বলার জন্য অপেক্ষা করছে। মূলতঃ মাহবুবের ফোন পেয়েই এখানে ছুটে এসেছে তারা।
অনেক ইতস্তত করে অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ঘটে যাওয়া পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল মাহবুব। হঠাৎ সাবু প্রশ্ন করলো, “ঘড়িতে তখন কটা বেজেছিল মনে আছে তোর??”

“হুম। ২.৫৯।” মাহবুবের উত্তর।
বিস্মিত হয় সাবু, বলল- “আতিক আমার কাছে ঠিক ৩ টার দিকে আসে এবং ঠিক একই রকমের কথাবার্তা হয় তার সাথে। বারবার বলতে থাকে যেনও তাকে আমরা মাফ করে দেই।”

মোতাহের জানালো, তার সাথেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে।
......এবং সময় তখন ২ টা বেজে ৫৯ মিনিট !! !


ভূকা ১৭ : অভিশাপ

খুবই একরোখা স্বভাবের ছিলেন আমাদের তানিয়া খালামনি। তবে পরিচিত জনের কাছে অনেক বেশি উচ্ছল ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে যেন উনার কি হয়ে গেল! কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। কারো সাথে তেমন একটা কথাও বলেন না।
কিছুদিন পর হঠাৎ উনার হাত পা ফুলে যেতে লাগলো। তাই উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন আমার মামা। ডাক্তার অনেক কিছুই পরীক্ষা করতে দিলেন কিন্তু কিছুই ধরতে পারলেন না। ধীরে ধীরে উনার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হতে লাগলো। অনেক ডাক্তার দেখানো হল কিন্তু কেউই কিছু ধরতে পারলেন না। এদিকে তানিয়া খালামনি দিনকে দিন আর বেশি নিস্তেজ হয়ে পড়তে লাগলেন। সারাদিন শুধু কান্নাকাটি করতেন।

 তানিয়া খালামনি এর কিছুদিন পর মারা যান।

 মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে উনার গায়ের চামড়া খসে খসে পড়া শুরু করে। উনার পুরো শরীর এক বীভৎস রূপ নেয়। বাড়ির সকলে এই ব্যাপারে অনেক বেশি চেষ্টা করেও কিছু জানতে পারেনি। অবশেষে, ১২ই ডিসেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।
তানিয়া খালামনি মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর, যখন মোটামুটি সবাই তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা ভুলতে বসেছে তখন তার মৃত্যুর আসল রহস্য উন্মোচিত হয়। তানিয়া খালামনির ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল। মৃত্যুর কারনটা জানা যায় সেই ডায়েরি পড়ে। সেটায় স্পষ্ট ভাবে লেখা ছিল সব। তানিয়া খালামনি লিখেছিলেনঃ

“.........আজ আমি বিরক্ত হয়ে একটা বিড়ালের গায়ে গরম পানি ঢেলে দেই। কিন্তু, আশ্চর্যের ব্যাপার হল, দুপুরে ঘুমানোর সময় আমি বিড়ালটাকে স্বপ্নে দেখতে পাই। বিড়ালটা আমাকে ৪ টুকরো আপেল খেতে দেয়, কিন্তু, এক টুকরো খেয়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।”

“.........আজ আবার বিড়ালটা আমার স্বপ্নে এসেছিলো। আমি যেন শুনতে পাই যে ওটা স্পষ্ট ভাষায় বলছে, “আমাকে যেভাবে কষ্ট দিলি, তোকেও সেভাবে কষ্ট পেতে হবে।”এরপর বিড়ালটি তার আকার পরিবর্তন করে খুব ভয়ঙ্কর একটা রূপ নেয়।”


ডায়েরিতে এতটুকু পর্যন্ত লেখা ছিল।

ডায়েরির উপরের ঘটনাটুকু পড়ার পর কারোই আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, ঐ বিড়ালটা কোন সাধারন বিড়াল ছিল না। বরঞ্ছ অশরীরী টাইপের কিছু ছিল। গরম পানি ঢেলে দেয়ায় বিড়ালটার গায়ের চামড়া যেমন খসে খসে পড়ে, তেমনি তানিয়া খালামনির গায়ের চামড়া ও খসে খসে পড়েছিল।


::সংগৃহীত::


ভূকা ১৬ : বাস্তবে ভূতের কোন অস্তিত্ব আছে কী ?

ভূতপ্রেত সত্যিকার অর্থে আছে কি-না এ নিয়েই অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে দ্বিধা যতোই থাকুক না কেন সব জাতের মানুষই ভূতপ্রেতের অস্তিত্বে অল্প বিস্তর বিশ্বাস করে। অদ্ভূত সব ভূতুড়ে কাহিনী আর ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। অনেকে আবার তাদের নিজেদের চোখে দেখা ভূতের কাহিনীও শুনিয়ে থাকেন। হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বিশ্বাস হলো, ভূতপ্রেত এক স্বতন্ত্র জাতি বিশেষ। বলা হয়, মরার পর মানুষ তার কর্মফল অনুযায়ী ভূত বা অশরীরী আত্মা হয়ে দেখা দেয়। এদের নিজেদের কোনো চেহারা থাকে না আর তাই যেকোনো আকারে দেখা দিতে পারে।

এমনিতে চোখে দেখা না গেলেও ভূত যেকোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে আবার অদৃশ্য হয়েও যেতে পারে। প্রচলিত বিশ্বাস হলো- ভূতপ্রেত সবই বাস করে ভাঙা বাড়িতে, গোরস্তানে, পুকুর পাড়ে, কুয়োর মধ্যে, ছমছমে নিঝুম জায়গায়, বট-অশ্বথ গাছে ডালে। বহু জাতির মধ্যে রীতি হলো মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক শেষকৃত্য করা, যাতে তার আত্মা ভূত হয়ে ফিরে এসে মানুষকে উত্যক্ত না করে।

 বিজ্ঞানীদের মতামত এক্ষেত্রে ভিন্ন। তারা মনে করে, ভূতের অস্তিত্ব নেহাতই একটা কাল্পনিক ব্যাপার। বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের বিচারে ভূত দেখার ঘটনা হলো মন বা চোখের বিভ্রম। একটা জিনিসের সত্যি সত্যি অস্তিত্ব থাকলেও বিভ্রম দেখা দেয় যখন আমাদের চোখ বা মন তাকে অন্যভাবে দেখতে চায়।

মরুভূমিতে যে মরীচিকা দেখা যায় সেও এক ধরনের বিভ্রম। দারুণ তেষ্টায় ছটফট করতে করতে মনে হয় সামনেই যেন একটা বিরাট পুকুরে পানি টলটল করছে। তেষ্টা মেটানোর জন্য পুকুর পাড়ে পৌছতে গিয়ে দেখা যায়, যেন পুকুরটা খালি দূরে সরে যাচ্ছে। যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, পানি পর্যন্ত আর যাওয়া সম্ভব হয় না। আর এ করতে করতে পথহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত মরে যেতে হয়। মরুভূমির পানি এই যে বিভ্রম ঘটে তার পেছনে রয়েছে বালির ওপর সূর্যের আলোর এক বিশেষ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। আসলে পানি তো আর সেখানে থাকে না, পানির আভাস বা বিভ্রম ঘটে যখন বালির ওপর গাছপালার উল্টো প্রতিফলন ফুটে ওঠে।

এক ধরনের বিভ্রমকে বলা হয় অমূল প্রত্যক্ষ (hallucination). এই অমূল প্রত্যক্ষ বা যা নেই তাকে দেখার ব্যাপারটা ঘটে যখন নানা কারণে মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে বা একটা সংশয় দেখা দেয়। আবার কয়েক রকম নেশা করলেও এমনটি হতে পারে। আর সে অবস্থায় মানুষ অনেক কিছুই শুনতে পায়। আশ্চর্য অদ্ভুত অনেক কিছুই দেখতে পায়। ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে সে সব দেখে আতঙ্কিত হয়। আর তখনই ভূতপ্রেতের আমদানি হয়। কোকেন নামক নেশা জাতীয় পদার্থ খেয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে মনে হতে পারে, শরীরের ওপর দিয়ে যেন পোকা-মাকড় কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তাই বুঝতে পেরেছেন, ভূতপ্রেতদের আসল অস্তিত্ব বাস্তবে কোথাও নেই। সবই হলো মনের ভ্রম।
ভ্রম সত্যি যাই হোক না কেন ভূতপ্রেতের চিররহস্যময়তা কখনোই ম্লান হবার নয়। কেউ বিশ্বাস করেন আর কেউ বলেন হাস্যকর।


ভূকা ১৫ : হিঙ্গুলী জামিয়া মাদ্রাসা মসজিদ

ঘটনাটা ৩১ জুলাইয়ের।

জ্বর জ্বর লাগছে সেই গতকাল দুপুর থেকে। তার ওপর প্রচন্ড গরম- কারেন্ট নেই। বিছানায় শুয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করছি। ঘেমে বিছানার চাদর ভিজিয়ে ফেলেছি। ফেনারগান খেয়েছিলাম সর্দি আর কাশির জন্য। সারা দুপুর-রাত মাতালের মত বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে। বার কয়েক মেঝেতে শুয়ে গরমের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেছি। মশার কামড় শুরু হতেই আবার বিছানায় মশারির ভেতর ঢুকে পরতে হয়েছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঘুম। ওষুধ খেয়ে ঘুমালে স্বপ্নে যা দেখি সব হয় আবোল তাবোল। কিন্তু গতকাল সেরকম দেখিনি। প্রত্যেক ঘুমের ছোট ছোট অংশে অনেকটা খন্ড নাটকের মত স্বপ্ন দেখেছি দুপুর থেকে একেবারে ভোর রাত পর্যন্ত। স্বপ্নটা আবোল তাবোল নয়। খুব স্পষ্ট এবং প্রত্যেকবারই মনে হয়েছে আমি ঐ সময়টায় সে জায়গাতেই ছিলাম।

স্বপ্নের প্রথম অংশে আমি একটা মাদ্রাসার পুকুর পাড়ে বসে ছিলাম। যোহরের আযান দেয়নি তখনো। দেবে দেবে এমন সময়। পুকুরের সবুজ শ্যাওলা ভরা পানি দাপিয়ে মাদ্রাসার বাচ্চাগুলো গোসল করছে। আমি সিঁড়িতে বসে দেখছি তা। দৃশ্যটায় কোনো বৈচিত্র নেই। খুব স্বাভাবিক। ওদের পানির ছিটে এসে আমার গায়ে পড়ছে। শ্যাওলার জমাট পানি শার্টটা ভারি করে তুলছে ক্রমশ। এ অবস্থায় হঠাৎ খেয়াল করলাম এতগুলো বাচ্চাদের ভীড়ে পানির মাঝে আরো একজন। দেখতে অনেকটা বাচ্চা ন্যাড়া মেয়েদের মত। কিন্তু গায়ের চামড়া অস্বাভাবিক রকমের ফ্যাকাসে। চুপচাপ গলা পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। এবং আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। কেমন গা শিরশিরে অনুভূতি হল হঠাৎ।

আমার প্রথম বারের মত ঘুম ভাঙ্গল। এবং আমি আবিষ্কার করলাম আমার গায়ের শার্টটা সবুজ শ্যাওলায় রীতিমত মেখে আছে।
শার্টের এ দশা হবার পেছনে কোনো যুক্তি সে সময়ে দাঁড় করাতে পারিনি। তারওপর কড়া ঘুমের ওষুধের প্রভাবে যুক্তি-তর্ক-বিশ্লেষণ- কোনোটাই খাটছিল না মাথার ভেতর। লাগছিল সবটাই খুব স্বাভাবিক। মাতালের মত বিছানা থেকে সে সময় উঠে পড়তে হয়েছে, হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসেছে ছেলেটা। সেটা রেখে দিতে হল। খাবার নেয়ার সময় আমার শার্টের এ অবস্থা দেখে কেমন ভাবে যেন তাকাতে লাগল ছেলেটা। কিছু জিজ্ঞেস করল না অবশ্য। বুড়ো মানুষের ভীমরতি ভাবল বোধ হয়।

নামায পড়ার জন্য গোসল সেরে নেয়া উচিত। তাই আর বিছানা মুখো হলাম না। যদিও এখনো ঘুমে শরীর অবশ প্রায়।
আমার দ্বিতীয় দফা ঘুম থেকে স্বপ্ন গুলো এতই জীবন্ত হতে লাগল যে আমি একবারও বুঝতে পারিনি এগুলো স্বপ্ন, এবং কোনো ধরনের প্রশ্নও জাগেনি আমার ভেতরে সে সময়।
আমি গোসল সেরে নামায পড়ে শুয়ে পড়ি। খেতে ইচ্ছা করছিল না তখন। খালি পেটেই ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়া। ঘুমে মাতালের মত লাগছে। শুয়ে চোখ বন্ধ করা মাত্রই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

 প্রায় সাথে সাথে চোখ মেললাম। আমি মাদ্রাসার মসজিদের বারান্দায় শুয়ে আছি। ছোট ছোট বাচ্চারা পাঞ্জাবী পাজামা পরে নামায পড়ছে আমার সামনের দিকে। আমি ওদের পেছন দিকে। কেউ আমাকে খেয়াল করছে না মনে হল। তাকাচ্ছে না কেউ আমার দিকে দেখলাম। আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। চারপাশে তাকালাম। সরাসরি চোখ চলে গেল মসজিদের দান বাক্সের গায়ে লেখাটার ওপর। মসজিদের বারান্দার একটা থামের গায়ে ঝোলানো ওটা।

                                  “ হিঙ্গুলী জামিয়া মাদ্রাসা মসজিদ
                      মেহেদীনগর, বারইয়ার হাট, মিরসরাই, চট্টগ্রাম”

আমি উঠে দাঁড়ালাম। টলছি মাতালের মত। আস্তে আস্তে হেটে এলাম দান বাক্সটার সামনে। ওখানে আরো একটা নতুন কাগজ টানানো দেখলাম। “অসুস্থ মাদ্রাসা ছাত্রের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসুন” একটা ছোট নোটিস দেয়া। বোধ হয় কোনো ছাত্র অসুস্থ। আমি মানিব্যাগ বের করে একটা দশ টাকার ছেঁড়া নোট বের করলাম। টাকা ঢোকানোর ছিদ্রটা জ্যাম হয়ে গেছে। ঢোকানো যাচ্ছে না। তালাটা খোলা। এমনি ছিটকিনিটার হুকে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। চুরি টুরির ভয় নেই মনে হয়। আমি তালাটা খুলে ছিটকিনি উঠিয়ে ঢাকনাটা খুললাম। সবে মাত্র টাকাটা ফেলেছি হঠাৎ দেখলাম উঠানে গায়ে চাঁদর মুড়ি দিয়ে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মাথার মেয়েটা এককোনায় বসে রয়েছে! এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!

ঝটকা দিয়ে জেগে উঠলাম। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। কারেন্ট আসেনি এখনো। কিন্তু ভীষণ অবাক হলাম একটা জিনিস দেখে। আমার হাতে ছোট একটা তালা! মসজিদের দান বাক্সের সেই তালাটা.........

আমার তৃতীয় দফার ঘুমটা হল শেষ বিকেলের দিকে। কারেন্ট এসেছে তখন। ক্যাপাসিটর নষ্ট ওয়ালা ফ্যানটা ঘটর ঘটর করে মাথার ওপর ঘুরছে। হাত দিয়ে ঘোরালে হয়ত আরো জোরেই ঘুরতো। চোখ বোজার সাহতে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এবারেও নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই মাদ্রাসাটায় আবার চলে এসেছি আমি।

এবার বেশ অবাক হয়ে দেখলাম মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চাগুলো একটা লাশ নেয়া খাটিয়ার চারপাশে ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে। নিচু স্বরে ফোঁপাচ্ছে কেউ। আমি মাথা উঁচিয়ে দেখলাম। কোনো ছোট বাচ্চা মারা গেছে। কাফন দিয়ে পেঁচানো। কেবল মুখটা বার করা। চার পাঁচ বছর হবে বয়েস। জানাযা পড়ানো হবে এখন। মাদ্রাসার হুজুর-আলেমরা সহ সবাই এসে সারি করে দাঁড়িয়ে পরতে বললেন। ঈমাম সাহেব লাশটাকে সামনে রেখে জানাযা পড়ানো শুরু করলেন। আমি একরকম ঘোরের মধ্যেই নিয়ত বেঁধে জানাযায় দাঁড়িয়ে গেলাম।

এখানে অনেক লোকজন এসেছে। গ্রামের লোকজন বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যে মারা গেছে- তার কেউ বোধ হয় আসেনি। অন্তত আসলে সেটা হাব ভাবেই প্রকাশ পেত। একবার সন্দেহ হল- বাচ্চাটা অনাথ না তো?

লাশটা কবর দেয়ার জন্য মসজিদের পাশের গোরস্থানের দিকে যখন নিয়ে যাচ্ছে খেয়াল করলাম গ্রামের লোক গুলো খুব অবাক মুখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলছে না।

আমি নিজেও কিছুটা দ্বিধা দন্দ্বে ভূগছি। সবার সাথে আমিও কবর দিতে এলাম। প্রকৃয়াটা খুব দ্রুত হল। মাটি দেয়ার সময় কয়েক মুঠো মাটি দেয়ার পর যেই আবার মাটি নিয়েছি হাতে- দেখলাম আমার ঠিক সামনে, কবরের অন্য পাশে সেই ফ্যাকাসে ন্যাড়া মেয়েটা! লোকজনের আড়াল থেকে স্থির চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে......
 আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবং এ দফায় আবিষ্কার করলাম আমার ডান হাতে মুঠো ভরা কাঁচা মাটি!

  শেষ স্বপ্নটা দেখি মধ্য রাতে। তখন জ্বর বেড়েছে ভীষণ। থেকে থেকে কাঁশছি। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছি। জ্বরে সারা শরীর কাঁপছে। ঘুম আসতে সময় নিচ্ছিল তাই। কখন ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই।
 চোখ মেলে দেখলাম আমি মসজিদের পাশের গোরস্থানটার একটা গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসে আছি। আমার ঠিক সামনেই নতুন বাঁশের বেড়া দেয়া সেই কবর। আকাশে অর্ধেক চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় অস্পষ্ট একটা শব্দ পাচ্ছি গোরস্থানের ভেতর। অনেকটা ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া কান্নার মতশব্দ। কিন্তু শব্দটা কেমন যেন চাপা। আমি ভয় পেলাম হঠাৎ ভীষণ রকমের একটা ভয়। হাত পা সব অসাড় হয়ে আসতে নিল- এমন একটা ভয়...... খুব হাচড়ে পাচড়ে এক রকম উঠে দাঁড়ালাম গাছটা ধরে। চাঁদের আলোয় কবরটার দিকে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে উষ্ণ রক্তের একটা স্রোত বয়ে গেল মেরুদন্ডের ওপর দিয়ে। আমার স্পষ্ট মনে হল কবরটা নিঃশ্বাস নেয়ার সময় যে ভাবে বুক ওঠা নামা করে- সে ভাবে বেশ জোরেই ওঠা নামা করছে! তারপর লাগল কবরের মাটিগুলো থেকে থেকে লাফিয়ে উঠে নেমে যাচ্ছে! যেন নিচ থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে বের হতে চাচ্ছে! সেই সাথে ছোট বাচ্চার ভয় পাওয়া গুমোট-চাপা কন্ঠস্বর!

আমি এত ভয় পেলাম যে দ্বিগ্বীদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে গোরস্থানের মাঝ দিয়ে মসজিদের দিকে দৌড়াতে লাগলাম। তার মাঝেই দেখলাম সেই ন্যাড়া মাথার মেয়েটা একটা কোঁদাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছের নিচে। হাত তুলে সেই নতুন কবরটার দিকে যেতে বলছে ইসারায় আমাকে। হাতের কোঁদালটা দেখিয়ে বোঝাচ্ছে কবরটা খোঁড়ার জন্য আমাকে!

আমি প্রচন্ড ভয়ে তখন সংজ্ঞাহীন প্রায়। পেছন থেকে আসা কবরের ধুপ ধুপ শব্দটা তাড়া করছে যেন আমাকে.........

আমি জেগে উঠি ফযরের আযানের মুহূর্তে। আমার সারা গায়ে ধূলো বালি, মাটি আর নানান জায়গায় ছিলে গেছে কাঁটার ঘষা খেয়ে...... বিমূঢ়ের মত বসে রইলাম আমি......

আমি পেশায় সরকারী চাকুরীজীবি। টাইপিস্টের কাজ করি। নিজের চলে না বলে বিয়ে থা আর করিনি। পঞ্চাশের মত বয়স হয়েছে বলে এখন আর ওসব করার চিন্তাও মাথায় আনিনা। একা একা থাকি বলে নানান রোগে শোকে ভূগি। ছোট বেলা থেকে এক ফুফুর কাছে মানুষ হয়েছি। তাকে টুকটাক সাহায্য করি এখন। এছাড়া আমার জগৎ খুব সীমাবদ্ধ। সে রাতের স্বপ্ন গুলো নিয়ে খুব যে ব্যস্ত হয়ে পরব এমন মানুষও নই আমি। একা থাকি বলে হয়ত মনের ভূলে এসব দেখেছি। শার্ট, তালা, মাটি- এসবের ব্যাখ্যা মনের ভূল বলেই হয়ত চালিয়ে দিয়ে ভূলে যেতাম পুর ব্যাপারটা। কিন্তু নিছক স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিতে পারিনি আমি সেটাকে।

 ৩১ জুলাইয়ের বিচিত্র ঘটনা গুলো আমার পক্ষে ভূলে যাওয়া সম্ভব হল না পত্রিকায় একটা লেখা দেখে। ৩রা জুনের একটা পত্রিকায় “হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে জীবন্ত কবর দেয়া হয় ভূল বশত” শিরোনামে একটা আর্টিক্যাল চোখে পড়ে আমার। সব ওলোট পালট লাগতে শুরু করে তখন। কারণ সেখানে বলা হয়েছেঃ

   "৩১ জুলাই বিকালে জুবায়ের আলী নামের এক ছোট পাঁচ বছরের মাদ্রাসা ছাত্র মারা যায়। স্থানীয় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করার পর বাদ আসর তাকে মসজিদ সংলগ্ন গোরস্থানে কবর দেয়া হয়। পরদিন ভোরবেলা ফযরের নামায শেষে ঈমাম সাহেব কবর জিয়ারত করতে গিয়ে দেখেন কবরের মাটি সরে গেছে অনেক। যেন কেউ ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেয়েছে। তাঁর সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয় এবং সবাই বাক রুদ্ধ হয়ে দেখে কবরের কোনায় সাদা কাফন পরে ছেলেটা বাঁকা হয়ে বসে আছে। তার বসে থাকার ভঙ্গিটা খুব অস্বাভাবিক। কবরের দেয়াল জুরে ছেলেটার আঙ্গুলের আচোঁড়ের চিহ্ন। শ্বাস নিতে না পেরে দেয়াল খাঁমচে বের হবার চেষ্টা করেছিল বোঝা যায়। চোখ গুলো কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রায়। পা দিয়ে কবরের মেঝে ঘষে লম্বা লম্বা খাঁজ করে মাটি উঠিয়ে ফেলেছে ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণায়!"

ভূকা ১৪ : জ্বিনের সাক্ষাতকার

কিছুদিন আগে এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম তার নানা বাড়ী। চাচাতো ভাইয়ের নানা বাড়ী মানে আমারও নানা বাড়ী। নানার তিন ছেলে। মেঝ ছেলের নাম শরিফুল আলম। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। কবিরাজী চিকিৎসার সাথেও জড়িত। মামার বোন মানে চাচীর কাছে ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে মেঝ মামার সাথে নাকি কোন এক জ্বীনের পরিচয় আছে। কিন্তু কখনোই বিশ্বাস করতে পারি নাই। কারণ জ্বিন মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করে সেটা কল্পনা করাও কঠিন।
যাই হোক আসল কথায় আসি। গত মার্চ মাসের ২৫ তারিখ, শুক্রবার রাতে আনুমানিক পৌনে এগারটার সময় মামা বললেন, ‘চল, এক জায়গায় যাই। তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব’। মামার সিডি-৮০ মোটর বাইকের পেছনে চড়ে বসলাম। গ্রামের ভেতর দিয়ে সশব্দে বাইক এগিয়ে চলল। মিনিট দশেক পরে আমরা গ্রাম পেরিয়ে মাঠের মাঝে একটা জায়গায় থামলাম। এখানে একটা বড় গাছের নীচে আমরা দাড়ালাম। কিছুক্ষন দুজন নিজেদের মধ্যে টুকিটাকি কথা বললাম। তারপর মামা সামনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘ভাইজান আসতেছে’।

দেখলাম একজন লোক মাঠের ভেতর থেকে আইলের উপর দিয়ে হেটে রাস্তার দিকে আসছে। আমাদের থেকে ৪০/৫০ গজ দুরে হবে। রাতটা বেশি অন্ধকার না আবার আলোকিতও না। আকাশে হালকা মেঘ আছে। চাদের আলো মাঝে মাঝেই ঢেকে যাচ্ছে মেঘের আড়ালে। যাই হোক মানুষটি ক্রমশ আমাদের কাছে এগিয়ে আসছে। আমি ভেতরে ভেতরে শিহরিত হচ্ছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। মনে মনে সুরা ফাতেহা পড়া শুরু করলাম। আমার অবস্থা মামা কিছুটা আঁচ করতে পারলেন। বললেন, ‘ভয় নেই। তার সাথে কথা বলে দেখবি উনি যে জ্বিন সেটা টেরই পাবি না। স্বাভাবিক থাকিস’। উনি এখন আমাদের থেকে মাত্র দশ বারো হাত দুরে। উচু লম্বা একজন লোক বলে মনে হলো। হাত উচু করে সালাম দিলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম শরিফুল আলম ভাই। আসসালামু আলাইকুম ইয়াজিদ সিকান্দার ভাই’। বলতে বলতেই উনি আমাদের কাছে চলে এলেন। প্রথমে মামার সাথে আলিঙ্গন ও করমর্দন করলেন। ভয় পাচ্ছিলাম। তবুও মামা যেহেতু আলিঙ্গন করলেন। তাই বুকের ভেতর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলাম।

লোকটা প্রায় ৭ ফুট লম্বা। অনেকটা নীচু হয়ে আমাদের হয়ে আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন। করমর্দন করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাই, ভয়ের কিছু নেই। আমিও আপনাদের মতই মহান আল্লাহর সৃষ্টি’।


তার কথায় আমার ভয় কিছুটা কেটে গেল। তাছাড়া স্পর্শ করার সময় মনে হলো আমি যেন কোন মানুষের সাথেই আলিঙ্গন করছি।
কুশল বিনিময় হলো। লোকটার শরীর যতটা বলিষ্ঠ, কন্ঠ ঠিক তার বিপরীত। কিছুটা ফ্যাসফ্যাসে মেয়েলী কন্ঠ।
নিজেই থেকেই বললেন, ‘ভাই, অবাক হচ্ছেন, না? অবাক হওয়ারই কথা। আমি শরিফুল ভাইয়ের অনুরোধে আজ আপনার সাথে সাক্ষাত করতে এলাম’।

এরপর আমরা রাস্তার পাশে একটা পড়ে থাকা একটা গাছের গুঁড়ির উপর যেয়ে বসলাম। জ্বিন ভাইটির সাথে অনেক কথা হলো। সব কথা মনেও নেই। ভীষন উত্তেজিত ছিলাম। তবে আমাদের আলোচনার মূল অংশটুকু আপনাদের জন্যে নীচে তুলে দিলাম।

আমিঃ ভাই, আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে। কোনটা রেখে কোন প্রশ্ন করি। তার চেয়ে আপনি নিজেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন।
সোলায়মান জ্বিনঃ আমার নাম সোলায়মান বিন হুশশাম। সুলেমান নামেই পরিচিত। আমার বসত ভারতের কাস্মীর উপত্যকায় অবস্থিত বান্দিপোড়া জেলায়। আমার গ্রামের নাম সুবানগর। একেবারেই পাহাড় ঘেষা নিরিবিলি একটা গ্রাম। এখানে আমরা প্রায় দেড় হাজার জ্বিন-পরী বসবাস করি। এই গ্রামে কোন মানুষ বসবাস করে না। আমরা জ্বীনরাই গ্রামটির জন্ম দিয়েছি। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বসত করত। এখন আমরা করি।

গোটা পৃথিবীকে ৭টি এলাকায় বিভক্ত করে জ্বীনরা বসবাস করে। তবে আপনাদের মতো আমাদের এলাকাগুলো স্থল কেন্দ্রিক নয়। আমাদের এলাকাগুলো দ্বীপ কেন্দ্রিক। মোটামুটি নির্জন ও বিস্তীর্ন এলাকা আমাদের পছন্দ। পৃথিবীতে অনেক দ্বীপ আছে যেখানে কোন মানুষ বসবাস করে না। শুধু জ্বীন-পরীরা বসবাস করে। তবে স্থলেও প্রচুর জ্বিন পরীর বসবাস আছে। সবচেয়ে বেশি বসবাস রাশিয়া, ইরান, ভারত ও গ্রানাডায়।

আমিঃ সোলায়মান ভাই, পৃথিবীতে এখন কত জ্বিন আছে?
সোলায়মান জ্বিনঃ সেটা বলা মুশকিল। এক এলাকার জ্বিন অন্য এলাকায় যেতে পারে না। তাই অন্য এলাকার খবর রাখাও কঠিন। তবে মানুষের থেকে জ্বিন পরীর সংখ্যা অনেক কম হবে। জ্বিনের সংখ্যা সবচেয়ে কম। পরীরা বেশিদিন বাচে, আর তাদের সংখ্যাও অনেক বেশি।

আমিঃ সোলায়মান ভাই, আপনার পরিবার সম্পর্কে বলেন....
সোলায়মান জ্বীনঃ ভাই, আমার বয়স ২৭৮ বছর। আপনি হয়ত জানেন না আমরা জ্বিনেরা আপনাদের তুলনায় অনেকদিন বেশি বেচে থাকি। একেকজন জ্বিন সাধারনত গড়ে ৪৫০ বছর জীবিত থাকে। স্ত্রী জ্বিন অর্থাৎ পরীরা সাধারনত পাঁচশ বছর বেচে থাকে। আমার তিনজন বিবি আছেন। পাঁচটি কন্যা ও দুটি পুত্র আছে।

আমিঃ আপনারা কি সব ভাষায় কথা বলতে পারেন?
সোলায়মান জ্বীনঃ না (হেসে) ভাই, আমি বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দূ ও আসামিজ এই পাঁচটি ভাষা জানি। আমাদের গ্রামে একটি স্কুল আছে। সেখানে আমি ইংরেজি ও উর্দূ ভাষা শেখায়।

আমিঃ ভাষাগুলো কিভাবে শিখেছেন?
সোলায়মান জ্বীনঃ আমি প্রায় চল্লিশ বছর চট্টগ্রামে ছিলাম। সেখানে একটা স্কুলে বাংলা শিখেছি। ইংরেজি ও হিন্দি শিখেছি দিল্লীতে, উর্দূ শিখেছি আমার এক চাচার কাছে। উনি দীর্ঘ দীর্ঘদিন লাহোরে চিলেন। ভালো উর্দূ জানেন। আর আমার দাদী আসামিজ ভাষা ভালো জানতেন। তার কাছেই ওটা শিখেছি। মানুষ যেভাবে কোন বিদ্যা রপ্ত করে, আমরা জ্বিনরাও একই পদ্ধতিতে সেই বিদ্যা রপ্ত করি। আমরাও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, লেখাপড়া করি। আমরা যে কোন স্তন্যপায়ী প্রানীর আকার ধারন করতে পারি। বাচ্চা ছেলে থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত আকার ধারন করতে পারি।

আমিঃ আচ্ছা, আমি তো শুনেছি যেখানে আলো থাকে সেখানে আপনারা থাকেন না......
সোলায়মান জ্বীনঃ না ভাই, এটা ভুল ধারনা। অবশ্য অনেকেই এরকম মনে করে। আমরা দিন রাত যে কোন জায়গায় যে কোন সময় উপস্থিত হতে পারি। কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু ইয়াজিদ ভাই, আজ আপনাকে আর সময় দিতে পারছি না। আমাকে যেতে হবে।

শরিফুল আলমঃ সোলায়মান ভাই, আপনি আমার ভাগ্নের জন্যে দোয়া করবেন।
সোলায়মান জ্বীনঃ আবার দেখা হবে। ফি আমানিল্লাহ শরিফুল ভাই, ফি আমানিল্লাহ ইয়াজিদ ভাই....

এই বলে হাত নাড়তে নাড়তে বড় গাছটার ওপাশে চলে গেলেন। এরপর আর কোন সাড়া শব্দ নেই। কিছুক্ষন সময় লাগলো আমার ঘোর কাটতে। দৌড়ে গেলাম গাছের ওপাশে। না, কেউ নেই। পাশেই ধু ধু মাঠ, কোথাও কেউ নেই।
আমি আর মামা মোটর বাইকে চেপে ফিরে এলাম।

পোস্টের সমাপ্তি

[জ্বীন গবেষক ইয়াজিদ সিকান্দার সম্প্রতি কাশ্মীরের এক জ্বিনের সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং উনার সাক্ষাতকার নিয়েছেন। এই লেখাটি তার কপি-পেস্ট]

ভূকা ১৩ : খবির মা

ঘটনাটি পাঠিয়েছেন অহিদ ছাদের ...

গ্রামে এবং আশে পাশে প্রায়ই দেখতাম এবাড়ীতে সেবাড়ীতে জ্বিন ভূতের রোগী। কোনো কোনো রোগী আবার দীর্ঘদিন যাবত ভুগে ভুগে এমন পর্যায়ে গেছে যে তার আর অব্যাহতির কোনো উপায় নেই। খবির মা নামে পরিচিত এক মহিলা ছিলো এমনই এক জ্বিনের রোগী যাকে আমরা তার মৃত্যু অবধি জ্বিন ঘাড়ে করে বেঁচে থাকতে দেখেছি। খবির মা অনেক সন্তানের মা। খবি নামের তার এক বড়ো মেয়ে ছিলো। খবির বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো এবং সে অন্য কোনো গ্রামে গৃহবধু হয়ে বসবাস করতো। খবিকে না চিনলেও আমরা তার মাকে তার নামেই চিনতাম। গ্রামে মা বাবা সাধারনতঃ বড়ো সন্তানের নামেই পরিচিত হয়। যেমন আমার বড়ো ভাইয়ের নাম শামছুল হওয়ায় আমার বাবাকে সবাই শামছুলের বাপ বলে ডাকতো। খবির মা নাকি আমাদের জন্মের আগে পুরোপুরি ভালো ছিলো। অনেক গুনবতী বউ হিসেবে ঘর সংসার করেছে, সন্তান লালন পালন করেছে। তার বেশ কিছু নাতি পুতিও ছিলো। কিভাবে তাকে জ্বিনে ধরেছিলো তা কখনো শোনা হয়নি। তবে খবির মার অস্বাভাবিক জীবন যাপন ও কথাবার্তা শুনেছি এবং দেখেছি অনেক কাছে থেকে।

খবির মা রাতে কখনো ঘুমাতো না। কন্কনে শীতের রাতে যখন আমরা লেপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতাম তখন গভীর অন্ধকারের বুক চিরে খবির মা প্রত্যেক বাড়ির উঠান মাড়িয়ে কার সাথে যেনো গুনগুনিয়ে কি কথা বলতে বলতে হেঁটে যেতো। কখনো কাঁদতো, কখনো অট্টহাসিতে আটখান হয়ে পথ চলতো। তার কাছে শীত, গ্রীষ্ম আর বর্ষা সবই ছিলো সমান। বর্ষাকালে সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে তার ভেতরেও খবির মা অন্ধকারের পর্দা মাড়িয়ে এ বাড়ী সে বাড়ী করে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে খবির মার আপন জনেরা তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতো। কিন্তু তাকে হিতে বিপরীত হতো, তাছাড়া একজন মানুষকে কতকাল আর বেঁধে রাখা যায়?

গ্রামের মানুষ অনেক সময় ঘরের মূল অংশের ভেতরে না শুয়ে খোলামেলা বারান্দায় শুতে পছন্দ করে। বউ বা বড় মেয়ে থাকলে সামনে চাল থেকে নীচ অবধি একটা শাড়ি বা লুঙ্গি ঝুলিয়ে পর্দা করে নেয় যাতে বাইরের কেউ সচারাচার দেখতে না পারে। শোয়ার সময় মাথাটা ভেতরের দেয়ালের দিকে থাকে আর পা থাকে বাইরের দিকে তাক করা। খবির মা মাঝে মাঝে কি মনে করে কোনো কোনো বাড়ীতে থেমে আচমকা কারো পা ধরে টান দিতো। ঘুমের ভেতরে এমন টান খেয়ে ভয়ে ধুচমুচ করে উঠে অন্যদেরকে ডাকতে ডাকতে খবির মা ততোক্ষনে অনেক দূর পেরিয়ে যেতো। খবির মা অনেককে অনেকভাবে জালিয়েছে কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলতোনা। কারণ সবাই জানতো সে আগে অনেক ভালো একজন মহিলা ছিলো। এখন সে যা করে তা সে নিজের ইচ্ছায় করেনা। তার ঘাড়ে যে জ্বিন ভর করে আছে সে-ই তাকে দিয়ে ওইসব করায়।

আমি যখন একটু বেড়ে উঠি, কিছুটা বুদ্ধিসাদ্ধি হয়েছে, সম্ভবতঃ ক্লাস থ্রী’তে পড়ি, খবির মা তখন বার্ধক্যে উপনীত। এক শীতের রাতে গভীর ঘুমের ভেতর চারিদিক থেকে আগুন আগুন শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এক বাড়ীতে আগুনের লেলিহান দেখতে পাই। সবাই ছুটছে সেদিকে। কাছে গিয়ে দেখি আগুনটা এক বাড়ীর উঠানের এক পাশে। সে আগুনের মাঝে দাউ দাউ করে নির্বিকার জ্বলছে খবির মা। আমাদের এলাকাটা খেজুরের গাছ, খেজুরের রস এবং খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত। সকালে খেজুরের রস জালিয়ে গুড় বানানোর জন্য শীতকালে প্রত্যেক বাড়ীর আঙ্গিনায় বড়ো চুলা তৈরী করা হয়। এটাকে আমরা রসের বাইন বলি। সকালে গুড় জালানো শেষ হলেও বাইনের তলায় ছাইয়ের নীচে হয়তো কিছুটা আগুন থাকে। জ্বিন তাকে ওই রাতে ওই বাড়ীর বাইনের কাছে টেনে নিয়ে গেছে। সে ছাই খুচিয়ে খুচিয়ে আগুন বের করেছে। সে আগুন তার শাড়িতে লেগেছে, আশে পাশে শুকনো পাতায় লেগেছে। খবির মা নির্বাক প্রাণপন বাঁচার চেষ্টা করছে। সবাই গিয়ে যে যেভাবে পারে খবির মাকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু খবির মাকে বাঁচানো যায়নি শেষাবধি। তার সমস্ত শরীর ঝলসে গিয়েছিলো। খবির মার প্রাণটা একদিন ধুকধুক করে বেঁচে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ে।

ভূকা ১২ : ভুডু ম্যাজিক আসলে কী জিনিস ?

আফ্রিকার গোত্রীয় সংস্কার, ক্যারেবিয় আদিবাসী কৃত্য ও খ্রিস্টধর্মের শ্রেয়বোধ মিলিয়ে ভুডু যাদুমন্ত্রের উদ্ভব-যা সভ্য সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই এক তুমুল আলোচিত বিষয়। যে কারণে ভুডু শব্দটা বাংলাদেশেও একেবারেই অপরিচিত নয়। Voodoo- এই রহস্যময় শব্দের সঙ্গে অনেক গা ছমছমে ভৌতিক ধারণা জড়িয়ে আছে। যেমন নরবলি, রক্তপান ইত্যাদি। আসলে ভুডু সেরকম কিছু নয়; এটি আসলে নানান আদিম সংস্কার ও কৃত্যের আড়ালে থাকা একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম ভুডু। এই শব্দটির অর্থ স্রস্টা ঈশ্বর কিংবা বিরাট আত্মা। ভুডুর উৎপত্তি আফ্রিকায়, বিকাশ ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জ হাইতিতে। ভুডু আফ্রিকার মতোই অনেক পুরনো-যা কালক্রমে আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৫১০ সালের দিকে ইউরোপীয়রা দাসব্যবসা শুরু করে। তারা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে দাসদের বন্দি করে জাহাজে তুলে 'নতুন বিশ্বে' পাচার করত।
দাসদের ধরা হত আফ্রিকার নানা স্থান থেকে। তবে ডাহোমেই -অর্থাৎ বর্তমান বেনিন থেকেই অধিক সংখ্যক দাসদের বন্দি করে জাহাজে তোলা হত। বেনিন এ বসবাস করত ফন ভাষাগোষ্ঠীর জনগন ...এরা স্থানীয় ধর্মবিশ্বাস পালন করত। 'ভুডু' শব্দটিও ফন ভাষার। যার মানে, আগেই বলেছি বিরাট আত্মা।

সুতরাং ভুডু হল আফ্রিকার বেনিন প্রজাতন্ত্রেন ফন গোত্রের ধর্মবিশ্বাস +হাইতির আরাওয়াক আদিবাসী ধর্মবিশ্বাস + খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক ধর্মের কিছু মৌলিক ধারণার যোগফল। যে কারণে ... Voodoo is a religion that was brought to the Western coasts by slaves from Africa-এমন কথা আজ আর বলা যাবে না । ভুডুর উদ্ভবকাল অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। ১৮০৪ সালে কিউবার চাষীদের মাধ্যমে ভুডুর ধ্যানধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানায় পৌঁছায়।

ভুডু বলতে আজ অবশ্য হাইতির ধর্ম কেই বোঝায়। এর কৃত্য (রিচুয়াল) জটিল ও দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। উপাসনার ভাষা অপরিচিত বা গুপ্ত। (আসলে উপাসনার ভাষা ফন ও আরাওয়াক ভাষার মিশ্রণ।) ভুডু কৃত্যে নাচ একটি অনিবার্য অঙ্গ । নাচের সময় পূর্বপুরুষের আত্মা কাছাকাছি থাকে...নৃত্যরত ভক্তকে ছুঁলে পরিনতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। পুরোহিত ও নারী পুরোহিতের জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ খাদ্য। তাবিজ-কবজও ভুডুর অনিবার্য অঙ্গ। ভুডু দেবতার মূর্তি, পশুর শুকনো মাথা, কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ বিক্রি হয় ঔষধি হিসেবে- যা অশুভ শক্তি দূর করতে পারে। কিংবা মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে।

ভুডুর ঈশ্বর-এর নাম বনডাই। একেশ্বর। লোয়া হল আত্মা। লোয়া হল ঈশ্বরের অনুগত। নানা ধরনের লোয়া হতে পারে। যেমন: ভালো, মন্দ, জন্ম, স্বাস্থ ইত্যাদি। লোয়া মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে । তবে এই যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ভুডু ওঝার। ওঝার ওপর ভর করে লোয়া। এর ফলাফল কখনও ভালো কখনও মন্দ হয়। যমজ রহস্যময় শক্তির ধারণা রয়েছে ভুডুতে। যেমন: ভালো মন্দ; সুখি অসুখি। ভুডু বিশ্বাসীর ধারণা মৃত আত্মা আশেপাশেই থাকে। একজন ভুডু পুরোহিতের প্রধান উদ্দেশ্য হল-রোগ বালাই থেকে মুক্ত করে। ঔষধি কিংবা আইওয়ার সাহায্যে। পুরোহিত হুউনগান (পুরুষ); মামবো (নারী) ...এদের কাজই হল মানুষের অসুখ সারানো। এই পক্রিয়ায় অদৃশ্য আত্মার সাহায্য নেয় বলে ভুডু সম্বন্ধে ভুল ধারণা ছড়িয়ে। যে কারণে একজন গবেষক লিখেছেন:
Misconceptions about voodoo have given Haiti a reputation for sorcery and zombies. Popular images of voodoo have ignored the religion's basis as a domestic cult of family spirits. Adherents of voodoo do not perceive themselves as members of a separate religion; they consider themselves Roman Catholics. In fact, the word for voodoo does not even exist in rural Haiti. The Creole word vodoun refers to a kind of dance and in some areas to a category of spirits. Roman Catholics who are active voodooists say that they "serve the spirits," but they do not consider that practice as something outside of Roman Catholicism. Haitians also distinguish between the service of family spirits and the practice of magic and sorcery.

২০১০ এর জানুয়ারিতে হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ভুডু বিশ্বাস দুর্গতদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে। বহু বছর ধরে একের পর এক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে হাইতি। অনেকে এজন্য ভুডুকে দায়ী করেন। তবে ভুডু বিশ্বাসীরা বলেন, এশিয়াতে যখন সুনামি হল তখন ? ভূমিকম্প বা সুনামি প্রাকৃতিক কারণেই হয় এজন্য ঈশ্বর বা ভুডু দায়ি নয়।
ভুডু কৃত্যে পশুবলি অনিবার্য। বর্তমানে হাইতিসহ অন্যত্র ৮ কোটি মানুষ ভুডু চর্চা করে। এর বাইরে অনেকের কাছে ভুডু হল শিল্প।

তথ্যসূত্র:
http://www.facts-about.org.uk/history-and-events-timeline-haiti-and-voodoo.htm



ভূকা ১১ : জিন থাকলে সম্ভব

(ইসহাক আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

একবার আমরা ঘরের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লাম। চিকিৎসায় কাজ হলো না। পরীক্ষায় রোগ পাওয়া গেল না। তাহলে বৃত্তান্ত কি? বাবার একজন চাচাতো ভাই বললেন কবিরাজের কাছে যান। বাবা আমাকে নিয়ে গেলেন।

ভদলোক জানালেন, ঘরে নষ্ট আছে। ঘরের চালে আর খাটের নিচে।

একদিন লোকটি এলো।

বাড়ির বাইরে উঠোনে বসে কিছু বিড়বিড় করে বললো । তার্পরই উঠে ছুটে গেল ঘরের ভেতর। খাটের নিচে ঢুকে হাত দিয়ে মাটির মেঝে খুঁড়ে তাবিজ বের করলেন। ঘরের খুটি বেয়ে চালের টুয়া থেকে খামছে তাবিজ বের করলেন। চুলোর ভেতর খুড়ে তাবিজ বের করলেন। যেগুলো অবিশ্বাস্য হলেও আমি আমরা চাক্ষুষ করেছি। সাধারণ মানুষ খামছে খামছে চুলোর ভেতরের মাটি খুড়ে এক হাতের মত গর্ত করতে পারবে না। বা সাধার ভেজা মাটিতে হাতের কনুই পর্যন্ত গভীর গর্ত করতে পারবে না।

এখন যুক্তির কথা হলো যে, লোকটি আগেই হাতে তাবিজ রেখেছিলো। কিন্তু আমি তো সামনে। আর চুলোর ভেতর গর্ত করা কঠিন একটি ব্যাপার। লোকটি জানিয়েছিলো সাধারণ অবস্থায় সে এ কাজ করতে পারে না, সঙ্গে জিন থাকলে সম্ভব।





ভূকা ১০ : মানবজাতিতেই ভূত বংশ !!

পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নেই। এটাই চিরন্তন সত্য। কারণ একটাই, বাস্তব ভূতের সন্ধান আজও কেউ পায়নি। আর পাবে কিনা তাও সন্দেহ। আবার যাওবা আছে, তা শুধুই দাদুর কেচ্ছা কাহিনী ও ফিল্মে। কিন্তু এবার বাস্তব ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ভূত ক্ষতিকারী দানব ভূত নয়, মানুষ ভূত। তাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে রয়েছে আলোচিত এমনি এক মানুষ ভূতের বংশ। এই বংশের মানুষের নামের সঙ্গে ডাকা হয় ভূত বলে, যা এখন হেয় মনে করেন এই ভূত মানুষরা।

দৈনিক আমার দেশ, ঢাকা, সোমবার ২৯ নভেম্বর ২০১০
এনায়েতপুরে মানবজাতিতেই রয়েছে ভূত বংশ)

এনায়েতপুর থানার প্রত্যন্ত সৈয়দপুর গ্রামে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস, যা কয়েকটি বংশে বিভক্ত। এর মধ্যে মোল্লা, সরকার, বেপারী আর ভিন্ন নামের ভূত বংশ অন্যতম। আর এই ভূত বংশের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। এ বংশটি বর্তমানে শেখ বংশ নামেও কিছুটা পরিচিত। গত প্রায় ৮০-৯০ বছর আগে এই বংশের মানুষগুলো ছিল কালো, লম্বাটে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ভূতের মতোই অসম্ভব কাজগুলো করত তারা। তাই জমিতে তারা দিনের মতো সারা রাতেই কাজ করত। তাও ৪ জনের কাজ একাই। ১ বিঘা জমিতে সারা দিন পাট কাটতে যেখানে ১৫ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে এক রাতে তারা ৪ জন মিলেই এ পাট কেটে সাবাড় করে ফেলত। সকালে এলাকার মানুষ ঘুম থেকে ওঠে মাঠের পাট বাড়িতে দেখে হতবাক হয়ে যেত, যা ভাবা হতো অনেকটা অলৌকিক বিষয়। যে জন্য এলাকার তথা আশপাশের মানুষ এদের নামের সঙ্গে ভূত বলার প্রচলন শুরু করে দেয়। আর এই ভূত বংশের প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ আর সবার মতোই সৈয়দপুর গ্রামে একত্রে বসবাস করছে। গ্রামের অন্যান্য মানুষের মতো এদেরও পেশা কৃষি কাজ বলে জানান এই বংশের মানিক ভূত ও বাবুল ভূত। একই বংশের আক্কেল আলী জানান, তাদের মুরব্বিরা অতীতে গভীর রাতে অসম্ভব কাজগুলো করার কারণে লোকে ভূত বলে আসছে। তবে মূলত তারা শেখ বংশের মানুষ। কিন্তু মানুষ এখনও তাদের ভূত বলেই সংবোধন করে। অতীতে এই বংশের মানুষরা ছিল অশিক্ষিত ও গেও প্রকৃতির। তাই সে সভ্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে এখন বংশটির সব ছেলে-মেয়েই স্কুল-কলেজে করছে লেখাপড়া। যে কারণে নামের সঙ্গে ভূত বলার প্রচলন এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে—এমন দাবি করলেন বংশের মুরব্বি আতাউল গনি ওসমান শেখ। একই কথা স্বীকার করে স্থানীয় জালালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শাহজাদপুর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বজলুর রশিদ জানান, বংশটির মানুষের গায়ের রং ছিল কালো। যারা ১০ জনের কাজ ২ জন মিলেই করত, যা আসলেই দৈত্যের মতো। যে জন্যই ভূত বলার প্রচলন শুরু হয় সমাজে।