আমার বাবা একজন সরকারী চাকরীজীবি ছিলেন। উনি জীবনে কখনই ভুত প্রেতে বিশ্বাস করতেন না- কিন্তু ভগবানকে খুবই বিশ্বাস করতেন। আমাদের গ্রামে আমার ঠাকুরদাদা ও বাবার বেশ সুনাম ছিলো এবং আছে। কিন্তু আমার বাবার শত্রুও ছিলো। আমার ঘরেরই শত্রু- আমার ছোট ঠাকুরমা। উনি আমার দাদুর ছোট ভাই এর বৌ ছিলেন এবং উনি কারো উন্নতি সহ্য করেন না। কেউ উন্নতি করতে গেলেই উনি বাঁধা দিতেন-পরোক্ষ ভাবে।
আমার বাবা যখন আমাদের গ্রামেই ২ কাঠা জমি কিনেন বাবাদের চার ভাই মিলে তখন ঐ মহিলা আমার বাবাকে বাঁধা দেন মৌখিক ভাবে; বলেন উনার স্বামী-আমার ছোট দাদু মারা গেছেন নতুন জমি কিনে ওখানে পুকুর খুরতে গিয়ে। আমার বাবাও ঐ নতুন জমিতে পুকুর খোড়ার পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা জানতেন ঐ মহিলার কান্ড কারখানা, তাই কিছু না বলে পুকুর খোঁড়ান, তারপর পুকুরপাড়ে গাছ লাগান অনেক।
এর ১ বছর পর বাবার হার্ট এর প্রবলেম শুরু হয়। বাবা কাউকে বলতেন না উনার অসুখের কথা-শুধু মা জানত। মা ডাক্তার দেখান বাবাকে। আমি তখন ঢাকায়। বাবাকে ডাক্তার অনেক চেকআপ করান - অসুখ শুধু পেলেন হার্ট এর একটা ভেইন পুরু হয়ে গেছে চর্বি জমে। এটা খুব সাধারণ অসুখ তাই ডাক্তার নরমাল হার্ট এর ঔষধ দিলেন।
এভাবে কিছু দিন চলল। আমি তখন ঢাকা-বাবার অসুখ বেড়ে গেল। ডাক্তাররা কোন রোগ ধরতে পারছিলেন না। এমন সময় মার মনে সন্দেহ হয়-উনি এক কালীসাধিকার কাছে যান। কালীসাধিকা বলেন বাবাকে বান মারা হয়েছে; মরণ বান। বাবার হাতে ১০ দিন বাকি আছে -১০দিনের মাঝে বান কাটা না হলে বাবা মারা যাবেন। কে মেরেছে জিজ্বাসা করতেই ঐ মহিলার নাম বলেন কালীসাধিকা - যদিও কোন দিনই উনারা পরিচিত ছিলেন না।
মা বান কাটান ১০০০ টাকা খরচ করিয়ে। বান কাটানোর পরে বাবা সুস্থ হয়ে ওঠেন অনেকটা। দিন তিনেক না যেতেই বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। মা আবার যান ঐ কালীসাধিকার কাছে-কালীসাধিকা আবার বান কাটেন-এবার নাকি ৭ দিনের মাঝে মারা যাওয়ার জন্য বান মেরেছিলেন।
এরপর বাবা আবার সুস্থ হলেন। এর মাঝে ঐ মহিলা বাবাকে দেখতে আসেন। বাবাকে দেখতে আসার ছলে বাবাকে আবার বান মারেন উনি। বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবার খুবই খারাপ অবস্থা হল বাবার। হাসপাতালে ভর্তি করা হল বাবাকে। আমার কাকারা মার একটা কথাও বিশ্বাস করতেন না। তাই উনারা ডাক্তার এর কথার উপর ভরসা করেন।ডাক্তাররা বাবার হার্ট ব্লক ছাড়া কোন রোগই ধরতে পারছিলেন না।
এমন সময় মা আবার ঐ কালীসাধিকার কাছে লোক পাঠালেন -আর নিজে বসে থাকলেন বাবার পাশে - কালীসাধিকা আবার বান কাটলেন-এবার একটা আস্ত ডাবের ভেতর থেকে গল গল করে রক্ত বের হয় - এ সময় আমার বাবার মুখ দিয়েও বেশ রক্ত ঝড়ে। এর আগে বাবা বিছানায় বেশ ছটফট করছিলেন - বান কাটার পর তিনি বেশ সুস্থ হন। ডাক্তার বিকেল বেলা ছেড়ে দেবেন জানান। আমি ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম-ডাক্তারের কথা শুনে আমিও বাসায় চলে আসি। বাবার পাশে শুধুই মা ছিলেন।
এর এক ঘন্টা পরেই বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে ঐ মহিলা এক ঘন্টার বান মেরে বাবাকে মেরে ফেলতে পারেন।
বাবা এক সময় মারা যান। আমি শুনে স্থম্ভিত হয়ে পড়ি।
এরপর বাবাকে অনেকেই দেখেছে আমাদের গ্রামে যাওয়ার রাস্তায়। কেউ কেউ বাবার কান্না ও শুনেছে-কিন্তু যে আমি চাই বাবাকে খুব কাছে পেতে সেই আমার কাছে বাবা কখনোই দেখা দেননি। হয়তো আমি ভয় পাবো বলে। তবে এখনও কোন বিপদ হলেই তার আগে বাবাকে স্বপ্নে দেখি। দেখি বাবা হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আমার মাথায় - ঠিক যেমনটা আমাকে দিতেন ৫ বছর আগে।
পাঠিয়েছেন:
nosto kobi