ঘটনাটি পাঠিয়েছেন অহিদ ছাদের ...
গ্রামে এবং আশে পাশে প্রায়ই দেখতাম এবাড়ীতে সেবাড়ীতে জ্বিন ভূতের রোগী। কোনো কোনো রোগী আবার দীর্ঘদিন যাবত ভুগে ভুগে এমন পর্যায়ে গেছে যে তার আর অব্যাহতির কোনো উপায় নেই। খবির মা নামে পরিচিত এক মহিলা ছিলো এমনই এক জ্বিনের রোগী যাকে আমরা তার মৃত্যু অবধি জ্বিন ঘাড়ে করে বেঁচে থাকতে দেখেছি। খবির মা অনেক সন্তানের মা। খবি নামের তার এক বড়ো মেয়ে ছিলো। খবির বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো এবং সে অন্য কোনো গ্রামে গৃহবধু হয়ে বসবাস করতো। খবিকে না চিনলেও আমরা তার মাকে তার নামেই চিনতাম। গ্রামে মা বাবা সাধারনতঃ বড়ো সন্তানের নামেই পরিচিত হয়। যেমন আমার বড়ো ভাইয়ের নাম শামছুল হওয়ায় আমার বাবাকে সবাই শামছুলের বাপ বলে ডাকতো। খবির মা নাকি আমাদের জন্মের আগে পুরোপুরি ভালো ছিলো। অনেক গুনবতী বউ হিসেবে ঘর সংসার করেছে, সন্তান লালন পালন করেছে। তার বেশ কিছু নাতি পুতিও ছিলো। কিভাবে তাকে জ্বিনে ধরেছিলো তা কখনো শোনা হয়নি। তবে খবির মার অস্বাভাবিক জীবন যাপন ও কথাবার্তা শুনেছি এবং দেখেছি অনেক কাছে থেকে।
খবির মা রাতে কখনো ঘুমাতো না। কন্কনে শীতের রাতে যখন আমরা লেপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাতাম তখন গভীর অন্ধকারের বুক চিরে খবির মা প্রত্যেক বাড়ির উঠান মাড়িয়ে কার সাথে যেনো গুনগুনিয়ে কি কথা বলতে বলতে হেঁটে যেতো। কখনো কাঁদতো, কখনো অট্টহাসিতে আটখান হয়ে পথ চলতো। তার কাছে শীত, গ্রীষ্ম আর বর্ষা সবই ছিলো সমান। বর্ষাকালে সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে তার ভেতরেও খবির মা অন্ধকারের পর্দা মাড়িয়ে এ বাড়ী সে বাড়ী করে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে খবির মার আপন জনেরা তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতো। কিন্তু তাকে হিতে বিপরীত হতো, তাছাড়া একজন মানুষকে কতকাল আর বেঁধে রাখা যায়?
গ্রামের মানুষ অনেক সময় ঘরের মূল অংশের ভেতরে না শুয়ে খোলামেলা বারান্দায় শুতে পছন্দ করে। বউ বা বড় মেয়ে থাকলে সামনে চাল থেকে নীচ অবধি একটা শাড়ি বা লুঙ্গি ঝুলিয়ে পর্দা করে নেয় যাতে বাইরের কেউ সচারাচার দেখতে না পারে। শোয়ার সময় মাথাটা ভেতরের দেয়ালের দিকে থাকে আর পা থাকে বাইরের দিকে তাক করা। খবির মা মাঝে মাঝে কি মনে করে কোনো কোনো বাড়ীতে থেমে আচমকা কারো পা ধরে টান দিতো। ঘুমের ভেতরে এমন টান খেয়ে ভয়ে ধুচমুচ করে উঠে অন্যদেরকে ডাকতে ডাকতে খবির মা ততোক্ষনে অনেক দূর পেরিয়ে যেতো। খবির মা অনেককে অনেকভাবে জালিয়েছে কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলতোনা। কারণ সবাই জানতো সে আগে অনেক ভালো একজন মহিলা ছিলো। এখন সে যা করে তা সে নিজের ইচ্ছায় করেনা। তার ঘাড়ে যে জ্বিন ভর করে আছে সে-ই তাকে দিয়ে ওইসব করায়।
আমি যখন একটু বেড়ে উঠি, কিছুটা বুদ্ধিসাদ্ধি হয়েছে, সম্ভবতঃ ক্লাস থ্রী’তে পড়ি, খবির মা তখন বার্ধক্যে উপনীত। এক শীতের রাতে গভীর ঘুমের ভেতর চারিদিক থেকে আগুন আগুন শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এক বাড়ীতে আগুনের লেলিহান দেখতে পাই। সবাই ছুটছে সেদিকে। কাছে গিয়ে দেখি আগুনটা এক বাড়ীর উঠানের এক পাশে। সে আগুনের মাঝে দাউ দাউ করে নির্বিকার জ্বলছে খবির মা। আমাদের এলাকাটা খেজুরের গাছ, খেজুরের রস এবং খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত। সকালে খেজুরের রস জালিয়ে গুড় বানানোর জন্য শীতকালে প্রত্যেক বাড়ীর আঙ্গিনায় বড়ো চুলা তৈরী করা হয়। এটাকে আমরা রসের বাইন বলি। সকালে গুড় জালানো শেষ হলেও বাইনের তলায় ছাইয়ের নীচে হয়তো কিছুটা আগুন থাকে। জ্বিন তাকে ওই রাতে ওই বাড়ীর বাইনের কাছে টেনে নিয়ে গেছে। সে ছাই খুচিয়ে খুচিয়ে আগুন বের করেছে। সে আগুন তার শাড়িতে লেগেছে, আশে পাশে শুকনো পাতায় লেগেছে। খবির মা নির্বাক প্রাণপন বাঁচার চেষ্টা করছে। সবাই গিয়ে যে যেভাবে পারে খবির মাকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু খবির মাকে বাঁচানো যায়নি শেষাবধি। তার সমস্ত শরীর ঝলসে গিয়েছিলো। খবির মার প্রাণটা একদিন ধুকধুক করে বেঁচে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ে।
গ্রামে এবং আশে পাশে প্রায়ই দেখতাম এবাড়ীতে সেবাড়ীতে জ্বিন ভূতের রোগী। কোনো কোনো রোগী আবার দীর্ঘদিন যাবত ভুগে ভুগে এমন পর্যায়ে গেছে যে তার আর অব্যাহতির কোনো উপায় নেই। খবির মা নামে পরিচিত এক মহিলা ছিলো এমনই এক জ্বিনের রোগী যাকে আমরা তার মৃত্যু অবধি জ্বিন ঘাড়ে করে বেঁচে থাকতে দেখেছি। খবির মা অনেক সন্তানের মা। খবি নামের তার এক বড়ো মেয়ে ছিলো। খবির বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো এবং সে অন্য কোনো গ্রামে গৃহবধু হয়ে বসবাস করতো। খবিকে না চিনলেও আমরা তার মাকে তার নামেই চিনতাম। গ্রামে মা বাবা সাধারনতঃ বড়ো সন্তানের নামেই পরিচিত হয়। যেমন আমার বড়ো ভাইয়ের নাম শামছুল হওয়ায় আমার বাবাকে সবাই শামছুলের বাপ বলে ডাকতো। খবির মা নাকি আমাদের জন্মের আগে পুরোপুরি ভালো ছিলো। অনেক গুনবতী বউ হিসেবে ঘর সংসার করেছে, সন্তান লালন পালন করেছে। তার বেশ কিছু নাতি পুতিও ছিলো। কিভাবে তাকে জ্বিনে ধরেছিলো তা কখনো শোনা হয়নি। তবে খবির মার অস্বাভাবিক জীবন যাপন ও কথাবার্তা শুনেছি এবং দেখেছি অনেক কাছে থেকে।

গ্রামের মানুষ অনেক সময় ঘরের মূল অংশের ভেতরে না শুয়ে খোলামেলা বারান্দায় শুতে পছন্দ করে। বউ বা বড় মেয়ে থাকলে সামনে চাল থেকে নীচ অবধি একটা শাড়ি বা লুঙ্গি ঝুলিয়ে পর্দা করে নেয় যাতে বাইরের কেউ সচারাচার দেখতে না পারে। শোয়ার সময় মাথাটা ভেতরের দেয়ালের দিকে থাকে আর পা থাকে বাইরের দিকে তাক করা। খবির মা মাঝে মাঝে কি মনে করে কোনো কোনো বাড়ীতে থেমে আচমকা কারো পা ধরে টান দিতো। ঘুমের ভেতরে এমন টান খেয়ে ভয়ে ধুচমুচ করে উঠে অন্যদেরকে ডাকতে ডাকতে খবির মা ততোক্ষনে অনেক দূর পেরিয়ে যেতো। খবির মা অনেককে অনেকভাবে জালিয়েছে কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলতোনা। কারণ সবাই জানতো সে আগে অনেক ভালো একজন মহিলা ছিলো। এখন সে যা করে তা সে নিজের ইচ্ছায় করেনা। তার ঘাড়ে যে জ্বিন ভর করে আছে সে-ই তাকে দিয়ে ওইসব করায়।
আমি যখন একটু বেড়ে উঠি, কিছুটা বুদ্ধিসাদ্ধি হয়েছে, সম্ভবতঃ ক্লাস থ্রী’তে পড়ি, খবির মা তখন বার্ধক্যে উপনীত। এক শীতের রাতে গভীর ঘুমের ভেতর চারিদিক থেকে আগুন আগুন শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এক বাড়ীতে আগুনের লেলিহান দেখতে পাই। সবাই ছুটছে সেদিকে। কাছে গিয়ে দেখি আগুনটা এক বাড়ীর উঠানের এক পাশে। সে আগুনের মাঝে দাউ দাউ করে নির্বিকার জ্বলছে খবির মা। আমাদের এলাকাটা খেজুরের গাছ, খেজুরের রস এবং খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত। সকালে খেজুরের রস জালিয়ে গুড় বানানোর জন্য শীতকালে প্রত্যেক বাড়ীর আঙ্গিনায় বড়ো চুলা তৈরী করা হয়। এটাকে আমরা রসের বাইন বলি। সকালে গুড় জালানো শেষ হলেও বাইনের তলায় ছাইয়ের নীচে হয়তো কিছুটা আগুন থাকে। জ্বিন তাকে ওই রাতে ওই বাড়ীর বাইনের কাছে টেনে নিয়ে গেছে। সে ছাই খুচিয়ে খুচিয়ে আগুন বের করেছে। সে আগুন তার শাড়িতে লেগেছে, আশে পাশে শুকনো পাতায় লেগেছে। খবির মা নির্বাক প্রাণপন বাঁচার চেষ্টা করছে। সবাই গিয়ে যে যেভাবে পারে খবির মাকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু খবির মাকে বাঁচানো যায়নি শেষাবধি। তার সমস্ত শরীর ঝলসে গিয়েছিলো। খবির মার প্রাণটা একদিন ধুকধুক করে বেঁচে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়ে।