ভূকা ১২ : ভুডু ম্যাজিক আসলে কী জিনিস ?

আফ্রিকার গোত্রীয় সংস্কার, ক্যারেবিয় আদিবাসী কৃত্য ও খ্রিস্টধর্মের শ্রেয়বোধ মিলিয়ে ভুডু যাদুমন্ত্রের উদ্ভব-যা সভ্য সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই এক তুমুল আলোচিত বিষয়। যে কারণে ভুডু শব্দটা বাংলাদেশেও একেবারেই অপরিচিত নয়। Voodoo- এই রহস্যময় শব্দের সঙ্গে অনেক গা ছমছমে ভৌতিক ধারণা জড়িয়ে আছে। যেমন নরবলি, রক্তপান ইত্যাদি। আসলে ভুডু সেরকম কিছু নয়; এটি আসলে নানান আদিম সংস্কার ও কৃত্যের আড়ালে থাকা একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম ভুডু। এই শব্দটির অর্থ স্রস্টা ঈশ্বর কিংবা বিরাট আত্মা। ভুডুর উৎপত্তি আফ্রিকায়, বিকাশ ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জ হাইতিতে। ভুডু আফ্রিকার মতোই অনেক পুরনো-যা কালক্রমে আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। ১৫১০ সালের দিকে ইউরোপীয়রা দাসব্যবসা শুরু করে। তারা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে দাসদের বন্দি করে জাহাজে তুলে 'নতুন বিশ্বে' পাচার করত।
দাসদের ধরা হত আফ্রিকার নানা স্থান থেকে। তবে ডাহোমেই -অর্থাৎ বর্তমান বেনিন থেকেই অধিক সংখ্যক দাসদের বন্দি করে জাহাজে তোলা হত। বেনিন এ বসবাস করত ফন ভাষাগোষ্ঠীর জনগন ...এরা স্থানীয় ধর্মবিশ্বাস পালন করত। 'ভুডু' শব্দটিও ফন ভাষার। যার মানে, আগেই বলেছি বিরাট আত্মা।

সুতরাং ভুডু হল আফ্রিকার বেনিন প্রজাতন্ত্রেন ফন গোত্রের ধর্মবিশ্বাস +হাইতির আরাওয়াক আদিবাসী ধর্মবিশ্বাস + খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক ধর্মের কিছু মৌলিক ধারণার যোগফল। যে কারণে ... Voodoo is a religion that was brought to the Western coasts by slaves from Africa-এমন কথা আজ আর বলা যাবে না । ভুডুর উদ্ভবকাল অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি। ১৮০৪ সালে কিউবার চাষীদের মাধ্যমে ভুডুর ধ্যানধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুজিয়ানায় পৌঁছায়।

ভুডু বলতে আজ অবশ্য হাইতির ধর্ম কেই বোঝায়। এর কৃত্য (রিচুয়াল) জটিল ও দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। উপাসনার ভাষা অপরিচিত বা গুপ্ত। (আসলে উপাসনার ভাষা ফন ও আরাওয়াক ভাষার মিশ্রণ।) ভুডু কৃত্যে নাচ একটি অনিবার্য অঙ্গ । নাচের সময় পূর্বপুরুষের আত্মা কাছাকাছি থাকে...নৃত্যরত ভক্তকে ছুঁলে পরিনতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। পুরোহিত ও নারী পুরোহিতের জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ খাদ্য। তাবিজ-কবজও ভুডুর অনিবার্য অঙ্গ। ভুডু দেবতার মূর্তি, পশুর শুকনো মাথা, কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ বিক্রি হয় ঔষধি হিসেবে- যা অশুভ শক্তি দূর করতে পারে। কিংবা মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে।

ভুডুর ঈশ্বর-এর নাম বনডাই। একেশ্বর। লোয়া হল আত্মা। লোয়া হল ঈশ্বরের অনুগত। নানা ধরনের লোয়া হতে পারে। যেমন: ভালো, মন্দ, জন্ম, স্বাস্থ ইত্যাদি। লোয়া মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে । তবে এই যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ভুডু ওঝার। ওঝার ওপর ভর করে লোয়া। এর ফলাফল কখনও ভালো কখনও মন্দ হয়। যমজ রহস্যময় শক্তির ধারণা রয়েছে ভুডুতে। যেমন: ভালো মন্দ; সুখি অসুখি। ভুডু বিশ্বাসীর ধারণা মৃত আত্মা আশেপাশেই থাকে। একজন ভুডু পুরোহিতের প্রধান উদ্দেশ্য হল-রোগ বালাই থেকে মুক্ত করে। ঔষধি কিংবা আইওয়ার সাহায্যে। পুরোহিত হুউনগান (পুরুষ); মামবো (নারী) ...এদের কাজই হল মানুষের অসুখ সারানো। এই পক্রিয়ায় অদৃশ্য আত্মার সাহায্য নেয় বলে ভুডু সম্বন্ধে ভুল ধারণা ছড়িয়ে। যে কারণে একজন গবেষক লিখেছেন:
Misconceptions about voodoo have given Haiti a reputation for sorcery and zombies. Popular images of voodoo have ignored the religion's basis as a domestic cult of family spirits. Adherents of voodoo do not perceive themselves as members of a separate religion; they consider themselves Roman Catholics. In fact, the word for voodoo does not even exist in rural Haiti. The Creole word vodoun refers to a kind of dance and in some areas to a category of spirits. Roman Catholics who are active voodooists say that they "serve the spirits," but they do not consider that practice as something outside of Roman Catholicism. Haitians also distinguish between the service of family spirits and the practice of magic and sorcery.

২০১০ এর জানুয়ারিতে হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ভুডু বিশ্বাস দুর্গতদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে। বহু বছর ধরে একের পর এক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে হাইতি। অনেকে এজন্য ভুডুকে দায়ী করেন। তবে ভুডু বিশ্বাসীরা বলেন, এশিয়াতে যখন সুনামি হল তখন ? ভূমিকম্প বা সুনামি প্রাকৃতিক কারণেই হয় এজন্য ঈশ্বর বা ভুডু দায়ি নয়।
ভুডু কৃত্যে পশুবলি অনিবার্য। বর্তমানে হাইতিসহ অন্যত্র ৮ কোটি মানুষ ভুডু চর্চা করে। এর বাইরে অনেকের কাছে ভুডু হল শিল্প।

তথ্যসূত্র:
http://www.facts-about.org.uk/history-and-events-timeline-haiti-and-voodoo.htm