সিঙ্গাপুরের পশ্চিমের একটি প্রসিদ্ধ ভূতুড়ে স্থান আছে। জায়গাটা বুকিত তিমাহ রোডের পাশে অবস্থিত পুরাতন ফোর্ড মোটর ফ্যাক্টরি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী সেনাবাহিনী এই ফ্যাক্টরিটা তাদের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। মূলত: যুদ্ধাহত শত্রুসেনা বা প্রতিপক্ষের চর বা বন্দীদের এখানে ধরে এনে নির্যাতন এবং বন্দী করে রাখা হত। যুদ্ধ শেষ হলেও স্থানীয় লোকজন বলাবলি শুরু করল যে প্রায়শই তারা মৃতপ্রায় বা নির্যাতিত মানুষদের অস্পষ্ট আর্তনাদ শুনতে পায় ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে। এর কিছুদিন পর একটি চাকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টরিতে তাদের কাজ শুরু করে, কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কোন কারণ না দেখিয়েই তারা ফ্যাক্টরিটি ছেড়ে চলে যায়। ধারণা করা হয় যে, জাপানি সৈনিকদের হত্যা করা মানুষগুলোর ভূত এখানে বিরাজ করে। এরকম আরেকটি কুখ্যাত ভূতুড়ে এলাকা হল মালয়েশিয়ার জেন্টিং এলাকা। জায়গাটি পার্ক, ক্যাসিনো এবং পর্যটন শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও রহস্যজনকভাবে ভূতুড়েও বটে। এলাকার কিছু উচুঁ টিলা থেকে বেশ কিছু মানুষ লাফিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছে কোন এক সময়। অধিকাংশ পর্যটক রহস্যজনক ব্যক্তিকে মোটেলের ছাদ থেকে লাফ দিতে দেখেছে কিন্তু ভূমি স্পর্শ করার পূর্বেই যেন খোলা বাতাসে তাদের দেহ উধাও হয়ে যায়। অনেকে এও বলেছে যে, রাত্রে ঘুমাবার সময় তারা খালি ওয়ারড্রব থেকে অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পায়। কেউ কেউ কোন কারণ ছাড়াই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ভারতের রাজস্থানের বেনগার দুর্গকে তো রীতিমত সরকারিভাবে ভূতুড়ে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পৌরাণিক মতাদর্শানুযায়ী, রাণী রত্নাবালী এবং রাজা সিং শিব্রার মধ্যে এক তুমূল তান্ত্রিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এখানে এবং রাজা সে যুদ্ধে পরাজয় বহন পূর্বক মৃতু্যবরণ করেন। কিন্তু তিনি মৃতু্যর পূর্বে অভিশাপ দিয়ে যান যে, যে ব্যক্তি সূর্য উদয় হবার আগে এবং সূর্য অস্ত যাবার পড়ে এখানে অবস্থান করবে তার মৃতু্য হবে। সম্প্রতি আর্কিওলোজীকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া স্থানটিকে "হন্টেড" বা ভূতুড়ে ঘোষণা করেছে।
প্যারিসের ক্যাটাকম্ব জাদুঘরটি মূল শহরের মাটির নিচে একটি টানেল আকারে গড়ে তোলা। প্রায় ষাট লাখ মানব কংকাল দিয়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। শোনা যায়, মৃতদের আত্মা নাকি এই টানেলে প্রায়ই দৃশ্যমান হয়। কেউ কেউ নেদারল্যান্ডের অ্যানা ফ্রাঙ্ক জাদুঘরকেও ভূতুেড় বলে আখ্যা দেয়। কারণ অনেকে নাকি একটি বালিকাকে জানালার পাশে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন থেকে ১৬৪১ সালে ক্যাপ্টেন হেনড্রিক ভ্যান ডার ডেকেন তার জাহাজ নিয়ে বের হন। তার ইচ্ছা ছিল সমগ্রবিশ্ব ভ্রমণ করে আবারও তার প্রিয় দেশে প্রত্যাবর্তন করা। কিন্তু তার জাহাজ আর কোনদিন ফেরেনি, ভয়াল সমুদ্র হয়ত তা গ্রাস করেছে। আজও নাকি গভীর সমুদ্রে একটি নাবিকশূন্য ভূতুড়ে জাহাজের দেখা মেলে। লোকে এর নাম দিয়েছে দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান।
কেপ টাউনের অধিকাংশ ভবনগুলো ১৬৬৬ থেকে ১৬৭৯-এর মধ্যে নির্মিত। এদের মধ্যে অন্যতম হল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানী দ্বারা নির্মিত গুড হোপ ক্যাসল। মূলত এটি নির্মিত হয়েছিল বন্দীশালা হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ১৭২৯ সালের এপ্রিল মাসে গভর্নর পিটার গিসবার্থ ভ্যান সাতজন সৈনিককে কারাদণ্ড দেন এবং তাদের মৃতু্যদণ্ড এ ক্যাসেলেই কার্যকর হয়। সেই সৈনিকেরা মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত তাদের নির্দোষ বলে দাবী করেছিল এবং বারবার গিসবার্থকে বলেছিল যে ঈশ্বর একদিন তাদের অবিচারের শাস্তি গভর্নর গিসবার্থকে দিয়েই ছাড়বে। ঠিক সেদিনই অজানা কারণে গিসবার্থও মারা যায়। আজও নাকি মৃতপ্রায় সেনাদের সেই অভিশাপ শোনা যায়। অনেকে গিসবার্থকে নাকি স্বচক্ষে ভ্রমণরতও দেখেছে ক্যাসলের ভিতরে।
অস্ট্রেলিয়ার কুইসল্যান্ডের আর্চফিল্ড বিমানবন্দর বেশ পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বিমানবন্দর ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে যখন ২৭ মার্চ ১৯৪৩ সালে একটি সি-৪৭ ডেকোটা পেস্নন উড্ডয়ন করার কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয় এয়ারপোর্টে। মোট ২৩ জন সেনা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই মারা যান। এর মাত্র কিছুদিন পর থেকেই বিমানবন্দর কতর্ৃপক্ষ একটি অভূতপূর্ব ব্যক্তির দেখা পেতে লাগলেন। কেউ কেউ বর্ণনা দেন, লোকটা যুদ্ধ বিমানের পাইলট সম্ভবত, গায়ে ইউনিফর্ম পরা, যেন এখনই তাকে যুদ্ধে যেতে হবে। বেশিরভাগ সময়ই রানওয়েতে তাকে একা বিচরণ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে বেটি রোডে তার বিচরণ প্রায়ই লক্ষণীয়। তাসমেনিয়ার রিচমন্ডে অবস্থিত অন্যতম প্রাচীন নিদর্শনগুলোর একটি রিচমন্ড ব্রিজ। জর্জ সাইমন গ্রোভার নামে এক অপরাধী রিচমন্ড শহরের কুখ্যাত অন্য অপরাধীদের সাথে জোচ্চরি করে পলায়নরত অবস্থায় ধরা পড়ে যায়। সে অবস্থায় জর্জ ছিল মাতাল, তার শত্রুরা মারপিটের পর ঐ ব্রিজ থেকে তাকে নিক্ষেপ করলে জর্জ মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা নাকি এখনও জর্জের আত্মাকে ব্রিজ পাড়ি দিতে দেখে।। আরো রহস্যজনক হল, একা কোন মহিলা বা শিশু যদি রাতের বেলা ব্রিজ পাড়ি দেয় তবে একটি বৃহৎ কালো কুকুরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। লোকে একে জর্জ গ্রোভারের কুকুর বলে ডাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ্টেন রিন্ডসে হাউস মূলত এন্টিক সংগ্রহশালা। অনেকেই বলেন যে এখানে নাকি পরমাত্মারা প্রায়ই বিচরণ করে। প্রচলিত গল্পগুলোর মধ্যে একটি হল- হঠাৎ পাশের ঘরে একটি শব্দ হল, দর্শক পাশের ঘরে গিয়ে দেখল যে সব কিছুই যথাযথ স্থানে সাজানো আছে। অতপর সে পূর্বের ঘরে ফিরে এসে দেখল বিছানার চাদরে পাঁচ আঙ্গুলের হাতের ছাপ!
ম্যাসাচুসেটস-এর ৪৪নং রুটের লাল চুলো আগন্তুক এক কুখ্যাত ভূত। প্রত্যক্ষদশর্ীদের বর্ণনা মতে, চলমান গাড়ি থেকে রাস্তার মাঝখানে হন্টনরত একটি লোককে নাকি প্রায়ই দেখা যায়। পরনে জিন্সের প্যান্ট, লাল ফ্লানেলের শার্ট, দাড়ি এবং চুল লাল রঙের এই ভদ্রলোক নাকি এই রাস্তাতেই অনেক দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
বোস্টনের চার্লসগেট হোটেলটি বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু একবার এক ছাত্র এখানে আত্মহত্যা করায় কতর্ৃপক্ষ এমারসন কলেজকে ১৯৮১ সালে তা বিক্রি করে দেয়। কিন্তু লিফটে এক ছাত্রীর মৃতু্য হওয়ায় ধরে নেয়া হল যে হোটেলটি ভূতুড়ে। অনেক শিক্ষাথর্ী নাকি রহস্যময় ছায়ার নির্দেশ পেয়েছিল। অনুসন্ধান করতে নেমে তারা এক রহস্যাবৃত সত্য উদঘাটন করল। হোটেলের দেয়ালের ভেতরে এক গোপন কামরায় তারা কাল জাদু চর্চার প্রমাণ পায়। ১৯৯৪ সালে হোটেলটি নিলামে বিক্রি হয়ে গেলে কনডোমিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়।
আইওয়ার নিউটন শহরের নিউটন কমিউনিটি থিয়েটার ভূতুড়ে বলে কুখ্যাত। ১৯৬০-এর কোন এক সময়ে নাকি এখানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। যদিও কেউ এতে হতাহত হয়নি কিন্তু এরপর থেকে লাইট বুথ বা ব্যাক স্টেজে প্রায়ই নাকি একটি অপছায়া দেখা যায়।
আইওয়ার এমনি আরেকটি স্থান হল ভিলিস্কা হাউস। ১৯১২ সালের ১০ জুন কোন অজ্ঞাত ব্যক্তি ভিলিস্কা পরিবারের মোট আটজন সদস্যকে হত্যা করে। এরপর থেকেই ভিলিস্কা হাউসের নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। মনে করা হয়, ভিলিস্কা পরিবারের মৃত আত্মারা এখনও বিচরণ করে এ বাড়িতে।
ইস্টনের সাদা মহিলা এক মজার ভূত। কানেকটিকাটের এই ভূত নাকি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ছিল। রুট ৫৯ নামক রাস্তায় তার বিচরণ। প্রত্যক্ষদশর্ীদের মতে, রাস্তার মাঝে নাকি প্রায়ই একটি সাদা পোশাকের মহিলাকে দেখা যায়। অনেকে তো এও বলেন, আমি এইমাত্র একটা মানুষকে ধাক্কা দিলাম কিন্তু যেই না পেছন ফিরলাম দেখি কেউ নেই। কেউ কেউ বলেন, ভূতটা সম্ভবত কোন হত্যাকৃত মহিলার যাকে পাশের কবর স্থানেই দাফন করা হয়েছিল ১৮০০ সালে।
ইংল্যান্ডের ডেনহাম চার্চ কুখ্যাত মোট ১১টা ভূতের জন্য। চার্টটা অবস্থিত সাফলক সেন্ট মেরিতে। মাঝে মাঝে পুরনো চার্চ থেকে একজন বয়স্ক পুরোহিতকে বের হয়ে হাঁটতে দেখা যায়। কখনওবা একজন বৃদ্ধাকে চার্চ পাশর্্বস্থ ব্রিজের উপর হাঁটতে দেখা যায়। একজোড়া ভয়াল চোখের অপচ্ছায়ারও নাকি এ চার্চে দেখা মেলে। ১৯২০ সালে এক কৃষক শস্য কাটার যন্ত্রে পড়ে গিয়ে মস্তক ছিন্ন হয়ে মারা যায়। তার ভূত নাকি চার্চস্থ ফার্ম হাউসের ভেতর দেখা যায়। এছাড়াও চার্চের ভেতর মেঝেতে নাকি প্রায়ই রক্তের ছোপ দেখা যায়, অদ্ভূত সব আলো চার্চ হলের ভেতরে দেখা যায়। চার্চের নিকটস্থ গ্রামে বহুদিন পূর্বে এক সুন্দরী বাস করতো। ধারণা করা হয়, সে ছিল ডাইনী। অনেক পরে চার্চস্থ কূপের ভেতর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় এক মেয়ের কংকাল উদ্ধার করা হয়। সেই ডাইনীর আত্মা নাকি এখনও চার্চের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। সাফলকের ইপসউইসের পাইপার ভ্যালে ব্রিজের উপর দিয়ে রাতের বেলা প্রায়ই আলোক গোলক উড়তে দেখা যায়। অনেকে তো সাদা পোশাকের একটি দেহকে শূন্যেও ভাসতে দেখেছে বলে দাবী করেছে।
কুইনস হেড হোটেলটি ইংল্যান্ডের লিয়েস্টাশায়ারে অবস্থিত একটি তিনতলা সরাইখানা। এর নির্মাণকাল ১৭০০ শতাব্দী। কর্মচারীরা প্রায়ই অভিযোগ করে একজন লম্বা কালো রঙের ব্যক্তিকে তারা দেখেছে।
বার্নসডেল ফরেস্ট পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। কিংবদন্তীর নায়ক রবিনহুডের কবর আছে এখানে। শোনা যায়, রবিনহুডের হত্যাকারী রেড রজারকে জীবিত দেখেছে অনেকে। বর্তমানে জায়গাটা জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।