পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নেই। এটাই চিরন্তন সত্য। কারণ একটাই, বাস্তব ভূতের সন্ধান আজও কেউ পায়নি। আর পাবে কিনা তাও সন্দেহ। আবার যাওবা আছে, তা শুধুই দাদুর কেচ্ছা কাহিনী ও ফিল্মে। কিন্তু এবার বাস্তব ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ভূত ক্ষতিকারী দানব ভূত নয়, মানুষ ভূত। তাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে রয়েছে আলোচিত এমনি এক মানুষ ভূতের বংশ। এই বংশের মানুষের নামের সঙ্গে ডাকা হয় ভূত বলে, যা এখন হেয় মনে করেন এই ভূত মানুষরা।
দৈনিক আমার দেশ, ঢাকা, সোমবার ২৯ নভেম্বর ২০১০
এনায়েতপুরে মানবজাতিতেই রয়েছে ভূত বংশ)
এনায়েতপুর থানার প্রত্যন্ত সৈয়দপুর গ্রামে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস, যা কয়েকটি বংশে বিভক্ত। এর মধ্যে মোল্লা, সরকার, বেপারী আর ভিন্ন নামের ভূত বংশ অন্যতম। আর এই ভূত বংশের নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা কথা। এ বংশটি বর্তমানে শেখ বংশ নামেও কিছুটা পরিচিত। গত প্রায় ৮০-৯০ বছর আগে এই বংশের মানুষগুলো ছিল কালো, লম্বাটে এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। ভূতের মতোই অসম্ভব কাজগুলো করত তারা। তাই জমিতে তারা দিনের মতো সারা রাতেই কাজ করত। তাও ৪ জনের কাজ একাই। ১ বিঘা জমিতে সারা দিন পাট কাটতে যেখানে ১৫ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে এক রাতে তারা ৪ জন মিলেই এ পাট কেটে সাবাড় করে ফেলত। সকালে এলাকার মানুষ ঘুম থেকে ওঠে মাঠের পাট বাড়িতে দেখে হতবাক হয়ে যেত, যা ভাবা হতো অনেকটা অলৌকিক বিষয়। যে জন্য এলাকার তথা আশপাশের মানুষ এদের নামের সঙ্গে ভূত বলার প্রচলন শুরু করে দেয়। আর এই ভূত বংশের প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ আর সবার মতোই সৈয়দপুর গ্রামে একত্রে বসবাস করছে। গ্রামের অন্যান্য মানুষের মতো এদেরও পেশা কৃষি কাজ বলে জানান এই বংশের মানিক ভূত ও বাবুল ভূত। একই বংশের আক্কেল আলী জানান, তাদের মুরব্বিরা অতীতে গভীর রাতে অসম্ভব কাজগুলো করার কারণে লোকে ভূত বলে আসছে। তবে মূলত তারা শেখ বংশের মানুষ। কিন্তু মানুষ এখনও তাদের ভূত বলেই সংবোধন করে। অতীতে এই বংশের মানুষরা ছিল অশিক্ষিত ও গেও প্রকৃতির। তাই সে সভ্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে এখন বংশটির সব ছেলে-মেয়েই স্কুল-কলেজে করছে লেখাপড়া। যে কারণে নামের সঙ্গে ভূত বলার প্রচলন এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে—এমন দাবি করলেন বংশের মুরব্বি আতাউল গনি ওসমান শেখ। একই কথা স্বীকার করে স্থানীয় জালালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শাহজাদপুর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বজলুর রশিদ জানান, বংশটির মানুষের গায়ের রং ছিল কালো। যারা ১০ জনের কাজ ২ জন মিলেই করত, যা আসলেই দৈত্যের মতো। যে জন্যই ভূত বলার প্রচলন শুরু হয় সমাজে।