ভূকা ২২ : সর্বভুক জিন রাজু

নাম তার জিন রাজু। নামের মধ্যেই যেন চমক। সে কি খায়? তা জানার আগে জানতে হবে সে কি না খায়। জিন রাজু খায় কীটনাশক বাসুডিন, জ্যান্ত সাপ, ব্যাঙ, টিকটিকিসহ আরো কতো কি। দু'তিন কেজি ইউরিয়া সারও তার স্বাভাবিক খাবার। কখনো ফাঁসির দড়ি গলায় লাগিয়ে ঝুঁলে পড়ে গাছের ডালে!

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাছপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম সরকারের ছেলে রাজু। ৭ ভাই ২ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। ছোট বেলা থেকে দুর্দান্ত সাহসী ছেলে রাজু। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বতর্মান বয়স ৩৫। প্রথম খায় বিষ: ক্লাস থ্রিতে তখন পড়ে রাজু। বয়স ১০ কি ১১ হবে। নিজেদের ফসলি ক্ষেতে পোকামাকড় দমনের জন্য এক বোতল কীটনাশক আনে বাবা। সেই কীটনাশক বোতল হাতে নিয়ে ভাবনায় মসগুল রাজু। এই বিষ খেয়ে পোকা মাকড় মরে। কিন্তু আমি খেলাম অথচ মরলাম না_এমন যদি কিছু একটা হয়ে যায়। নিশ্চয়ই চারদিক জানাজানি হবে। নাম খ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে। এমনই এক ভাবনা থেকে তার শুরু। প্রথমে মাথার চুল কীটনাশক বোতলে ডুবিয়ে চুল চুষে চুষে খায়। এতে বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে। ২/১ দিন বন্ধ থাকার পর আবার শুরু। প্রতিদিন একবার। তারপর দুইবার চুষে খায়। ক্রমেই সহ্য এসে যায় তার। এক পর্যায়ে চুল বাদ দিয়ে সুতার আগা কীটনাশকে ভিজিয়ে খেতে শুরু করে। এরপর ড্রপারের সাহায্যে অভ্যস্ত হয়ে যায়। বতর্মানে সে বোতল দিয়েই কীটনাশক খেয়ে রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। খাদ্য তালিকায় আর যা আছে: সাপ, তেলাপোকা, টিকটিকি, ইঁদুর, ব্যাঙ, গুঁইসাপ, বিড়াল, কুকুর, শিয়াল সবই তার খাবার। এক কথায় সর্বভুক রাজু। তবে তার শর্ত দুটি। এগুলো জীবিত এবং দেশি হতে হবে।

অনেক জায়গায় উণ্ডুক্ত মঞ্চে বিচিত্র এসব খাবার খেয়ে বিপুলসংখ্যক দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে সে। ফাঁসিতে ঝোলা তার সর্বশেষ চমক: সাধনা তার চলছে। গলায় ফাঁস লাগানো দড়ি গাছে ঝুলিয়ে থাকেও সে কিছুক্ষণ। বিপজ্জনক কর্মে তার সাধনা চলছে দীর্ঘ এক যুগ ধরে। এ বিষয়টি নিয়ে তার উণ্ডুক্ত চ্যালেঞ্জ যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে ভেবে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রহণ করেনি। ফলে সে নিজেকে অপ্রতিদ্বদ্বী মনে করে। কেমন করে জিন রাজু হয়ে ওঠা: অলৌলিক কিছু 'জিন' দ্বারাই সম্ভব বলে নিজ থেকে রাজু নামের সঙ্গে জিন শব্দটি যুক্ত করেছে বলে সে জানায়।

তার কর্মকাণ্ডও জিনের মতো অলৌকিক বলে মানুষও এ নামে ডাকে। এছাড়া, জিন রাজু ডাকটি তার নাকি খুব ভালো লাগে। এলাকায় একটি কথা লোকমুখে আছে, ছোট শিশু বাচ্চারা দুষ্টমি করলে কিংবা না ঘুমাতে চাইলে মায়েরা জিন রাজুর কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যায়। ফ্রি চিকিৎসায় ছুটে চলা: সাপে কাটা কোনো রোগীর খবর পেলেই হলো। এক আজব আকর্ষণে ছুটে যেতে হয় তাকে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় বলে কথা নেই। ফ্রি চিকিৎসা তার গুরুর আদেশ। সামান্য পানিও পান করা যায় না রোগীর বাড়ি। এছাড়া, বাচ্চাদের বাতাস লাগা, রাতে বিছানায় প্রসাব করা, জিনে ধরা ইত্যাদি রোগেও চিকিৎসা করে সে। রাজুর নিজের কথা একদিনে এসব সাধন হয়নি। অনেক ধৈর্য, নীরব সাধনা করতে হয়েছে। ভারতের কামরূপ কামাখ্যায় থাকতে হয়েছে বেশ ক'বছর। ভাত, রুটির বদলে খেতে হয়েছে গাছের পাতা, বাকল। এক উপজাতি গুরুর শিষ্যত্ব পেয়ে ধন্য হয় জীবন।

তার বক্তব্য আমাদের দেশের বড় সমস্যা দারিদ্র্য। আমি এমন কিছু খাবার খেতে চাই যা খেয়ে দীর্ঘদিন না খেয়েও সুস্থ থাকা যায়। অনেক স্বপ্নই পারিবারিক দুরবস্থার জন্য সম্ভব হয় না। চর্চা চালাতেও হোঁচট খেতে হয় অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে। আমি যা খাই, হজম করি তা তিলে তিলে সাধনার ফল। আমার মতো শখ করে কেই যেন সর্বভুক না হয়। তাহলে কিডনি যাবে, পাকস্থলি যাবে, এমনকি যাবে স্বাদের এ জীবনটাই। রাজুর ইচ্ছে: অনেক দিনের সাধনা তার খ্যাতির জন্য। খ্যাতির জন্য মানুষ কি না করে। তার ইচ্ছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে তার আজব খাবার-দাবারের দৃশ্য দেশবাসীকে দেখানো। প্রয়োজনে মিনিট দুয়েকের জন্য ফাঁসিতে ঝোলাও।

হানিফ সংকেতের ইত্যাদি তার প্রথম টার্গেট।

ইতমধ্যে স্যাটেলাইট একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রস্তাব পেলেও সে রাজি হয়নি। তার চাই বাংলাদেশ টেলিভিশন_এটি শহর-গ্রাম জনপদের সর্বসাধারণ দেখে। এমন সুযোগ পেলে তার স্বপ্ন পূর্ণতা পাবে, সার্থক হবে পরিশ্রম।