ভূকা ১৬ : বাস্তবে ভূতের কোন অস্তিত্ব আছে কী ?

ভূতপ্রেত সত্যিকার অর্থে আছে কি-না এ নিয়েই অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে দ্বিধা যতোই থাকুক না কেন সব জাতের মানুষই ভূতপ্রেতের অস্তিত্বে অল্প বিস্তর বিশ্বাস করে। অদ্ভূত সব ভূতুড়ে কাহিনী আর ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। অনেকে আবার তাদের নিজেদের চোখে দেখা ভূতের কাহিনীও শুনিয়ে থাকেন। হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বিশ্বাস হলো, ভূতপ্রেত এক স্বতন্ত্র জাতি বিশেষ। বলা হয়, মরার পর মানুষ তার কর্মফল অনুযায়ী ভূত বা অশরীরী আত্মা হয়ে দেখা দেয়। এদের নিজেদের কোনো চেহারা থাকে না আর তাই যেকোনো আকারে দেখা দিতে পারে।

এমনিতে চোখে দেখা না গেলেও ভূত যেকোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে আবার অদৃশ্য হয়েও যেতে পারে। প্রচলিত বিশ্বাস হলো- ভূতপ্রেত সবই বাস করে ভাঙা বাড়িতে, গোরস্তানে, পুকুর পাড়ে, কুয়োর মধ্যে, ছমছমে নিঝুম জায়গায়, বট-অশ্বথ গাছে ডালে। বহু জাতির মধ্যে রীতি হলো মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক শেষকৃত্য করা, যাতে তার আত্মা ভূত হয়ে ফিরে এসে মানুষকে উত্যক্ত না করে।

 বিজ্ঞানীদের মতামত এক্ষেত্রে ভিন্ন। তারা মনে করে, ভূতের অস্তিত্ব নেহাতই একটা কাল্পনিক ব্যাপার। বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের বিচারে ভূত দেখার ঘটনা হলো মন বা চোখের বিভ্রম। একটা জিনিসের সত্যি সত্যি অস্তিত্ব থাকলেও বিভ্রম দেখা দেয় যখন আমাদের চোখ বা মন তাকে অন্যভাবে দেখতে চায়।

মরুভূমিতে যে মরীচিকা দেখা যায় সেও এক ধরনের বিভ্রম। দারুণ তেষ্টায় ছটফট করতে করতে মনে হয় সামনেই যেন একটা বিরাট পুকুরে পানি টলটল করছে। তেষ্টা মেটানোর জন্য পুকুর পাড়ে পৌছতে গিয়ে দেখা যায়, যেন পুকুরটা খালি দূরে সরে যাচ্ছে। যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, পানি পর্যন্ত আর যাওয়া সম্ভব হয় না। আর এ করতে করতে পথহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত মরে যেতে হয়। মরুভূমির পানি এই যে বিভ্রম ঘটে তার পেছনে রয়েছে বালির ওপর সূর্যের আলোর এক বিশেষ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন। আসলে পানি তো আর সেখানে থাকে না, পানির আভাস বা বিভ্রম ঘটে যখন বালির ওপর গাছপালার উল্টো প্রতিফলন ফুটে ওঠে।

এক ধরনের বিভ্রমকে বলা হয় অমূল প্রত্যক্ষ (hallucination). এই অমূল প্রত্যক্ষ বা যা নেই তাকে দেখার ব্যাপারটা ঘটে যখন নানা কারণে মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে বা একটা সংশয় দেখা দেয়। আবার কয়েক রকম নেশা করলেও এমনটি হতে পারে। আর সে অবস্থায় মানুষ অনেক কিছুই শুনতে পায়। আশ্চর্য অদ্ভুত অনেক কিছুই দেখতে পায়। ভয়ঙ্কর ভুতুড়ে সে সব দেখে আতঙ্কিত হয়। আর তখনই ভূতপ্রেতের আমদানি হয়। কোকেন নামক নেশা জাতীয় পদার্থ খেয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে মনে হতে পারে, শরীরের ওপর দিয়ে যেন পোকা-মাকড় কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তাই বুঝতে পেরেছেন, ভূতপ্রেতদের আসল অস্তিত্ব বাস্তবে কোথাও নেই। সবই হলো মনের ভ্রম।
ভ্রম সত্যি যাই হোক না কেন ভূতপ্রেতের চিররহস্যময়তা কখনোই ম্লান হবার নয়। কেউ বিশ্বাস করেন আর কেউ বলেন হাস্যকর।