চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার এক গ্রামের ঘটনা।
সেই গ্রামের একবারে পূর্ব পাশে একটা ঘর নিয়ে থাকতো শরিফা বিবি। স্বামী পরিতক্তা মেয়েমানুষ। সারাদিন মানুষের বাড়িতে ফুটফরমাশ খেটে যেই টাকা পেতো তা দিয়েই দিন কেটে যেতো। ছোট একটা মেয়ে ছিল শরিফার। বয়স ১১ বছর। সেই মেয়েকে নিয়েই গ্রামের একদম শেষ মাথার ঘরটিতে থাকতো সে।
যাই হোক, ঠিক তাদের বাড়িটার পাশেই একটা বিরাট আকারের বেল গাছ ছিল। সেই বেল গাছ নিয়ে গ্রামে নানান কথা প্রচলিত ছিল। মাঝে মাঝেই নাকি সেই গাছের নিচে একটা লোককে বসে থাকতে দেখা যেতো। লোকটিকে যখনই দেখা যেতো তখনই নাকি দূরে কোথাও কুকুর কাঁদার আওয়াজ পাওয়া যেতো।
মার্চ মাসের কোনও এক রবিবারে শহর থেকে নিজেদের দোকানের জন্য কেনাকাটা করে ফিরছিল একদল গ্রাম্য দোকানদার। সংখ্যায় তারা ১২-১৫ জনের মতো ছিলেন। রাত তখন ১১ টার মতো হবে। শরিফাদের বাসার সন্নিকটে আসতেই তারা দেখতে পেলেন, সেই গাছের নিচে লোকটি বসে আছে এবং লোকটিকে ঘিরে আছে একদল মানুষ আকৃতির ছায়ামূর্তি। প্রতিটা ছায়ামূর্তি আঁকারে যেকোনো মানুষের প্রায় দ্বিগুণ। তারা সবাই দেখে দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। মিনিট খানেক পরে একসময় ছায়ামূর্তিগুলো ভাসতে ভাসতে সেই গাছের উপরে উঠে মিলিয়ে যায় এবং এর খানিকপর লোকটিকে আজ দেখা যায় না। ঠিক সে সময় তাদের চমকে দিয়ে শরিফার ঘর থেকে ভয়ঙ্কর আর্তনাদের আওয়াজ ভেসে আসে। তারা প্রত্যেকেই ভয় পেয়ে যায় এবং দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে।
পরের দিন সকালে স্থানীয় কিছু মানুষ হাতে লাঠি সোটা নিয়ে সেই ঘরের দিকে গেলে ঘরের মেঝেতে শরিফা এবং তার মেয়ের মাথাবিহীন লাশ খুঁজে পায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের মাথাগুলো পাওয়া যায় সেই গাছের মগডালে। ঠিক যেখানে তার আগের রাতে লোকগুলো ঐসব ছায়ামূর্তি কে হারিয়ে যেতে দেখেছিল।
সেই ঘরটি এখনো আছে। বেল গাছটি এরপর কেটে ফেলা হয়। শোনা যায়, বেল গাছটি কাঁটার পর নাকি সেই মাটির নিচ থেকে একটা বস্তার ভিতর থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। লোকটাকে কেউ মেরে সেই গাছের নিচে চাপা দিয়ে রেখেছিলো। হয়তো অপঘাতে মরা কোনও ব্যাক্তি, যার শান্তি হয়নি কখনো।