প্রকাশ্যে দিনের আলোয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নাকি জ্বালাচ্ছে ভূত! তাদের দাবি, স্কন্ধকাটা, মামদো, মেছো, ব্রহ্মদৈত্যের মতো হেভিওয়েট ভূতেরা নাকি স্কুল চত্বর জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভূতের ‘খপ্পড়ে পড়ে’ এখন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের নাগরাকাটা ব্লকের চ্যাংমারি হিন্দি হাইস্কুলের কমপক্ষে ১৫ জন ছাত্রী।
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভূতের কোনো ব্যাপার নেই। ভয় থেকেই এক ধরনের মানসিক রোগের সৃষ্টি হয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে। তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলেছেন।
এখন পর্যন্ত কেবল ছাত্রীরাই ‘ভূত-আতঙ্কের’ শিকার হলেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অন্যদের মধ্যেও। ভয়ে নাকি ভর দুপুরেও স্কুলমুখো হচ্ছে না ছাত্র বা স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুই মাস আগে স্কুলটির কয়েক ছাত্রী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ছিল প্রচণ্ড গরম। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ভেবে তড়িঘড়ি করে কর্তৃপক্ষ স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণা করে দেয়। সেই ছুটির পর গত ১৫ জুন ফের স্কুল খুলে। এবারও কিছু ছাত্রী একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে। দেখা গেছে, স্কুলের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে এই ‘ভূত-আতঙ্ক’ বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা ছাত্রীরা মাঝে মধ্যেই ‘ভূত ভূত’ বলে ছটফট করে উঠছে। তাদের শান্ত করতে ঘুমের ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। ‘আতঙ্কে’ অনেকে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
‘ভূত-আতঙ্কে’ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চ্যাংমারি হিন্দি হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পূজা তিরকি ও অনামিকা মুন্ডা। তাদের ভাষায়, একদিন দুপুরে কেউ যেন সাদা শাড়ি পরে তাদের ডাকতে থাকে। না গেলে আচমকা মাথায় এসে চাটিও মারে। আবার ইয়া লম্বা মুলোর মতো সাদা দাঁত বের করে ভেংচি কেটেও চলে যায়। যা দেখে তারা আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্থানীয় নাগরাকাটা ব্লক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুভজিত বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক রোগের শিকার হয়েছে। মূলত ভয় থেকেই এমনটা হয়। তারা কোনোভাবে ভয় পাওয়াতে এই রকম করছে।
স্থানীয় চ্যাংমারি চা বাগানের চিকিৎসক উৎপলেন্দু মল্লিক বলেন, শিক্ষার্থীদের কারো মাথাব্যথা, কারও পেটব্যথা হচ্ছে। স্কুল থেকে অজ্ঞান অবস্থায় তাদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর জ্ঞান ফিরতেই তারা ভূতের কথা বলে রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করছে।
‘ভূত-আতঙ্কের’ কারণে অনেকেই স্কুল কর্তৃপক্ষকে ওঝা ডাকার পরামর্শও দিয়েছেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ আপাতত ওঝা নয়, শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা মেটাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের সহযোগিতায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের বিরোধী দলের নেতা তৃণমূল কংগ্রেসের অমরনাথ ঝাঁ বলেন, দিনের পর দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে শিক্ষার্থীরা একসময় আর স্কুলেই যেতে চাইবে না। অবিলম্বে প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য দাবি জানান তিনি।
Source
https://www.ntvbd.com/world/13348/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%89%e0%a6%aa%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac