পিশাচ

 সকাল থেকেই একটানা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এমন দিনে বাহিরে

 যেতেও ভালো লাগেনা। কিছুক্ষণ অনলাইনে গিয়ে সময় কাটানোর

 উদ্দেশ্যে পিসিটা অন করতে না করতেই বিদ্যুৎ চলে গেলো।

 একরাশ হতাশা নিয়ে ওখান থেকে উঠে মায়ের কাছে আসলাম। মা

 মেঝো বোনের সাথে ফোনে কথা বলছে। ওদের বাড়িতে নাকি

 কারে ভুতে ধরছে। কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলাম দুজনের

 কথোপকথন। ভুতের ব্যাপারে আমার কৌতুহলটা বরাবরই বেশী।

 মা কলটা কাটলো, জিজ্ঞেস করলাম ঘটনাটা কি? মা ঘটনাটা

 বললো। একরাশ হতাশা নিয়ে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, মাকে

 জিজ্ঞেস করলাম উনি কখনো ভুত দেখেছে কিনা। বললো সেটা কি

 বাদ আছেনি। বললাম একটার বর্ণনা দিতে। উনি শুরু

 করলো....(ওনার নিজের ভাষায়ই বলছি) আমার ছোট ভাইটা জন্ম থেকেই রোগা। তখন আর এতো ডাক্তার

 ছিলোনা। কবিরাজদের উপরেই ভরসা করা লাগতো। এক

 কবিরাজ বললো ছোট ভাইকে রাঘা মাছ খাওয়াতে হবে, ওই মাছ

 গুলায় অনেক প্রোটিন আর রক্ত হয়। অভাবের সংসার আমাদের

 এ মাছ কিনার টাকা কই পাবো? তাই আমি আর বড় ভাই রাতি

 দোনালি(লাঠিকে মাঝখান দিয়ে ভেঙ্গে কায়দা করে কপি বা ছেরাগ

 বসিয়ে তৈরী করা এক ধরনের আলোর উৎস)নিয়ে রাতে মাছ

 শিকারে বের হতাম। হাতে এক শিকওয়ালা টেঁটা নিয়ে। তখন

 বিলে অনেক মাছ পাওয়া যেতো। একদিন সারা সন্ধ্যা ঘুরেও

 তেমন মাছ পেলাম না,, তাই আমরা অন্যদিকে চললাম মাছের

 খোজে, যেদিকে মানুষ তেমন একটা যায়না। ওদিকে যাওয়া মাত্রই

 অনেক মাছের দেখা পেলাম। এমন মাছ মারতে মারতে আমরা

 অনেক দূরে চলে আসলাম বাড়ি আর লোকালয় থেকে। হটাৎ

 দেখলাম আরো কিছুদূর সামনে একটা আলো জ্বলছে,, কিন্তু

 আলোটা কোন দোনালি বা মানুষের আলোর মত না। আলোটা স্থির

 যেখানে পুকুরের সাথে বিলের সংযোগস্থল। আমরা আরো কিছুদূর

 যাওয়ার পর হঠাৎ আলোটা নড়ে উঠল। যা দেখলাম তার জন্য

 মোটেই প্রস্তুত ছিলামনা। একটা বিড়াল আকৃতির জন্তু মুখে আগুন

 নিয়ে বসে আছে মাছ খাওয়ার আশায়। ভাই বুঝলো আমি ভয়

 পাচ্ছি। তখন ওই জিনিসটাও আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেছে।

 ভাই বললো চল চল আমরা বাড়ি ফিরে যাই, এটা একটা বিড়াল।

 কিন্তু ওনার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ার্ত ছাপ। আমি বললাম চলেন

 ভাই। আমরা এবার ঘুরে হাটা ধরলাম। যেহেতু অন্ধকার রাত তার

 উপর হাতে খোলা বাতি দৌড়াতে গেলে নিভে যাওয়ার সম্ভাবনা

 আছে। আর আগুন থাকলে খারাপ কিছু কোন ক্ষতি করতে

 পারেনা। আমি সামনের দিকে হাটছি আর বারবার পিছন ফিরে

 তাকাচ্ছি। দেখি আলোটা আমাদের অনুসরন করে পিছু পিছু

 আসছে। ভয় আরো বেড়ে গেলো। ভাইয়ের হাত চেপে ধরলাম

 শক্ত করে। এভাবে কতদূর হাটছি জানিনা। একটা সময় মায়ের

 গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমাদের ডাকছে। আমরা ওনার

 ডাকে সাড়া দিলাম। অনেক কষ্টে ওনার কাছে পৌছলাম তারপর

 ওনাকে সব খুলে বললো ভাই। মা বললো তোদের ভাগ্য ভালো

 তাই ফিরে আসতে পেরেছিস, এগুলো হল পিশাচ। রাতে মাছ ধরে

 খায়। কিন্তু এদের সামনে পড়ে গেলে মানুষ মেরে ফেলে। আমরা

 অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মা ঘরে এনে আমাদের লবন পুড়ে

 খাওয়ালেন। যাতে আমাদের ভয় কমে যায়। এরপর থেকে আমরা

 আর কখনো ওদিকে মাছ মারতে যাইনি।